"ফ্যাসিবাদের পান্তা-ইলিশ ও চারুকলার দানব মোড়াল"
পোড়া মোড়ালের পুনর্জন্ম
ছোটভাই ফোনে অগ্নিশর্মা:
"ভাইয়া, চারুকলার সামনে যে নতুন মোড়ালটা বসেছে, সেটা দেখেছো? আগেরটার চেয়েও বিশ্রী! ওরা কি শিল্প নাকি শয়তানের বাসন দোকান চালায়?"
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম:
"ওটা শিল্প নয়, ওটা ফ্যাসিবাদের 'আপগ্রেডেড ভার্সন'। আগেরটা পোড়ানোর পর ওরা নতুন মোড়াল বানিয়েছে—এবার আরও বিকট, আরও নিষ্ঠুর! আগেরটা শুধু চোখ রাঙাতো, নতুনটা সরাসরি গিলোটিন হাতে দাঁড়িয়ে আছে!"
ছোটভাই: "কিন্তু এত বিশ্রী কেন? মুখটা দেখলে মনে হয় কেউ প্লাস্টিক সার্জারির বদলে হাতুড়ি দিয়ে মুখ বানিয়েছে!"
আমি: "ওটা ইচ্ছাকৃত। ফ্যাসিবাদ চায় মানুষ ভয় পাক, কিন্তু একই সাথে হাসিও। কারণ, মানুষ যখন ভয় আর হাসির মধ্যে ধাঁধায় পড়ে, তখন সে আর প্রতিবাদ করতে পারে না!"
মোড়াল নির্মাতাদের সাথে সাক্ষাৎকার
(চারুকলার গেটে তিন শিল্পী—মিস্টার চাটুজ্জে, মিস্টার বকচু ও মিসেস লেলাং—নতুন মোড়াল নিয়ে বিতর্ক করছেন।)
মিস্টার চাটুজ্জে (গর্বিত স্বরে):
"এবারের মোড়ালটা মাস্টারপিস! আগেরটায় শুধু ডানাওয়ালা ঘোড়া ছিল, এবার আমরা যোগ করেছি—ফায়ার-ব্রেথিং ড্রাগন, ট্যাংক-চালিত হাতি আর রোবটিক বাঘ! এটাই ট্রু আর্ট!"
মিস্টার বকচু (গম্ভীরভাবে):
"আর্ট মানে শুধু সুন্দর নয়, আর্ট মানে 'মেসেজ'। আমাদের মেসেজ হলো—'ভয় না পেলে গলা কাটা হবে!'"
মিসেস লেলাং (উত্তেজিত হয়ে):
"আরেকটা স্পেশাল ফিচার যোগ করেছি—মোড়ালের চোখে সিসি ক্যামেরা! কেউ যদি একে উল্টোভাবে দেখে, তাহলে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক!"
ছোটভাই (ফিসফিস করে): "ভাইয়া, এরা শিল্পী নাকি গুপ্তচর?"
আমি: "ফ্যাসিবাদের শিল্পীরা সবসময় গুপ্তচর হয়। ওদের ব্রাশে রং নয়, রক্ত লাগে!"
ফ্যাসিবাদের ইলিশ-মহোৎসব
(এদিকে, শহরের মেয়র "জনগণের জন্য" একটি ইলিশ উৎসবের আয়োজন করেছেন, যেখানে শুধু দলীয় কর্মীরাই প্রবেশ পাবে।)
মেয়র (মাইক্রোফোনে গর্জন করে):
"আজ আমরা ইলিশ বিতরণ করবো—গরিব-ধনী সবাই পাবে! (ঠিক তখনই একজন সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে)
"স্যার, আমি কি একটা পেতে পারি?"
মেয়র (ঠাণ্ডা স্বরে): "তুমি তো দলীয় কার্ড দেখাওনি?"
মানুষ: "কিন্তু আমি তো গরিব!"
মেয়র: "গরিব হওয়া অপরাধ! পুলিশ, এটাকে হটিয়ে দাও!"
ছোটভাই: "ভাইয়া, এটা ইলিশ উৎসব নাকি গরিব-শিকার উৎসব?"
আমি: "ফ্যাসিবাদে ইলিশ শুধু দলীয় নেতাদের জন্য। সাধারণ মানুষের জন্য শুধু 'ভার্চুয়াল ইলিশ'—ফেসবুকে লাইক দিলে একটা ইমোজি পাবে!"
বিদ্রোহের রেসিপি
(রাতের অন্ধকারে আমরা চার বন্ধু—আমি, ছোটভাই, পাগলা দাশু ও প্রফেসর চাটার্জি—গোপনে বৈঠক করছি।)
পাগলা দাশু: "এবারের মোড়ালটা আগের চেয়েও ভয়ংকর! এটাকে কিভাবে ঠেকাবো?"
প্রফেসর চাটার্জি: "গণতন্ত্রের ইতিহাস বলে, ফ্যাসিবাদ কখনো শিল্প দিয়ে ঠেকে না, ঠেকে হাসি দিয়ে! ওরা যতই ভয় দেখাক, আমরা ততই হাসবো!"
ছোটভাই: "ঠিকাছে! তাহলে আমরা কি করবো?"
আমি: "প্ল্যান হলো—
১. মোড়ালের নাকটা কার্টুন আঁকবো, যাতে সবাই হাসে!
২. ইলিশ উৎসবের বদলে আমরা 'পান্তা-ইলিশ রেসিস্ট্যান্স ফেস্ট' করবো!
৩. মেয়রকে একটা 'ফ্যাসিবাদ-ডিটেক্টর' গিফট দেবো—যেটা শুধু তার মুখে লাগালেই অ্যালার্ম বাজবে!"
সবাই: "এটাই সঠিক পদ্ধতি!"
(পরের দিন, শহরজুড়ে কার্টুনিস্টরা মোড়ালের নাক নিয়ে কার্টুন আঁকলো, কবিরা লিখলো বিদ্রূপের কবিতা, আর আমরা স্টল খুললাম—"ফ্যাসিবাদ-বিরোধী পান্তা-ইলিশ স্টল"!)
এক পুলিশ অফিসার (হুমকি দিয়ে):"এসব বন্ধ করো, নাহলে—"
ছোটভাই (হাসতে হাসতে): "নাহলে কি? আমাদের গলা কাটবে? কিন্তু সমস্যা হলো—আমরা তো ইতিমধ্যেই কার্টুন হয়ে গেছি!"
ফলাফল:
সেদিন শহরজুড়ে হাসির রোল উঠলো। মোড়ালের ভয়ংকর রূপ হাসিতে ডুবে গেল। মেয়রের ইলিশ-উৎসবে কেউ গেল না, সবাই আমাদের পান্তা-ইলিশ খেতে এলো!
অতঃপর,
ছোটভাই: "ভাইয়া, ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কী?"
আমি: "হাসি! কারণ, ফ্যাসিবাদ ভয় চায়, প্রশ্নহীন আনুগত্য চায়। কিন্তু হাসি হলো সেই অস্ত্র, যা ভয়কে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়!"
প্রফেসর চাটার্জি (যোগ দিয়ে): "আর একটা জিনিস—ক্ষুধার্ত মানুষ কখনো ফ্যাসিবাদ মেনে নেয় না। তাই পান্তা-ইলিশ খাওয়াতে থাকো, বিদ্রোহ বাঁচতে থাকবে!"
সবাই মিলে: "ফ্যাসিবাদ ধ্বংস হোক! পান্তা-ইলিশ দীর্ঘজীবী হোক!"
(সমাপ্ত)
বিশেষ দ্রষ্টব্য শেষ কথাঃ
ফ্যাসিবাদের মোড়াল যতই ভয়ঙ্কর হোক, তাকে পরাজিত করা যায়—হাসি দিয়ে, বিদ্রূপ দিয়ে, আর একপ্লেট গরম পান্তা-ইলিশ দিয়ে! কারণ, ইতিহাস প্রমাণ করেছে—"যে জাতি হাসতে জানে, সে জাতি কখনো দাসত্ব মেনে নেয় না!"