গোপন বৈঠকে বিতর্কিত মন্তব্য
ডেভিড রোয়েট এই মন্তব্য করেন ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুকে ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। যদিও এই বৈঠক ছিল গোপন, তবে তার বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করা হয় এবং তা ফাঁস হয়ে যায়। রোববার (২৩ মার্চ) মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর এই ভিডিও প্রকাশ করে, যা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
নিষ্পাপ শিশুদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান?
ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী, রাষ্ট্রদূত রোয়েট বলেন, গাজায় কিছু শিশু অস্ত্র ও গ্রেনেড বহন করছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। তার এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজরে আসে এবং তারা একে ‘যুদ্ধাপরাধের প্রচারণা’ হিসেবে আখ্যা দেয়।
বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা
রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যের পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো, বিশেষ করে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ), ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন তার বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
গাজার ভয়াবহ বাস্তবতা
জাতিসংঘের ইউনিসেফ-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ১৫,৬১৩ জনেরও বেশি শিশু নিহত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের এ ধরনের বক্তব্য যুদ্ধাপরাধের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া
সংবাদমাধ্যমের ফাঁস করা রেকর্ডিং অনুসারে, যখন ডেভিড রোয়েট এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউই আপত্তি করেননি। এতে বোঝা যায়, ইসরায়েলের উঁচু পর্যায়ে এমন মনোভাব প্রচলিত রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে এবং জাতিসংঘকে বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইন ও নৈতিকতার পরিপন্থী। এটি যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC)-এর হস্তক্ষেপের দাবি উঠতে পারে।
ডেভিড রোয়েটের বিতর্কিত মন্তব্য এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বাস্তবতা বিশ্বকে আবারও ভাবিয়ে তুলেছে। এই ধরনের বক্তব্য মানবাধিকারের ওপর গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে এবং পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ইসরায়েলের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।



















