close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ফেঁ সে যাচ্ছেন আওয়া মী আমলের গভর্নর-ডেপুটি গভর্নররা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োজিত সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের বিরুদ্ধে লুটপাট, অর্থপাচার ও অনিয়মের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গোয়েন্দা সংস্থাও তৎপর। সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতের চরম অব্যবস্থা ও ..

সাড়ে ১৫ বছরের ব্যাংক খাত লুটপাটের তদন্তে বড় ঝড়—আওয়ামী আমলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা নজরদারিতে

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে উঠেছিল এক লুটপাটের খনি। ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে, ধ্বংস হয়েছে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক কাঠামো। আর এই সর্বনাশে সহযোদ্ধার ভূমিকায় ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া গভর্নর এবং ডেপুটি গভর্নররা। এখন সেই সময়কার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে এক নির্দেশনা পাঠিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে চাওয়া হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে ২০২4 সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের তালিকা। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

তিনজন গভর্নর, ১৩ জন ডেপুটি গভর্নর এখন প্রশ্নের মুখে

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনজন গভর্নর এবং ১৩ জন ডেপুটি গভর্নর। এখনো দায়িত্বে আছেন দুইজন ডেপুটি গভর্নর—নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান।

আওয়ামী আমলে যেসব গভর্নর দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেন:

  • ড. আতিউর রহমান (২০০৯–২০১৬)

  • ফজলে কবির (২০১৬–২০২২)

  • আব্দুর রউফ তালুকদার (২০২২–২০২৪)

এদের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত নাম আতিউর রহমান। তার আমলেই ঘটে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রিজার্ভ চুরির ঘটনা। অথচ সেই সময় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া ছিল। এমনকি চুরির খবর গোপন করে সময় ক্ষেপণ করেন আতিউর, যার ফলে টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

আতিউরের সময়ই ঘটে সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারি এবং বেসিক ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি। তার মেয়াদেই শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সুপারিশে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা দেওয়া হয় যা পরবর্তীতে লুটপাটের বড় দরজা খুলে দেয়।

২০১৬ সালে আতিউরের পদত্যাগের পর গভর্নর হন ফজলে কবির। তার আমলে এস আলম গ্রুপ দখলে নেয় ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। গভীর রাতে বাড়িতে বসে ব্যাংক দখলের অনুমোদন দেন তিনি। সেই থেকেই শুরু হয় একটি সংঘবদ্ধ লুটপাট। ব্যাংক থেকে শেয়ারের নামে, ঋণের নামে, কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে তার সময়ে।

পরবর্তী গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে বড় ছাড় দিয়ে ঋণখেলাপিদের পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি করেন। তার সময়ে এস আলম গ্রুপের ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে ঋণের নামে তুলে নেওয়া হয়। এভাবে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ নিঃশেষ হতে থাকে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

ডেপুটি গভর্নরদের তালিকাও ভারী অপরাধের অভিযোগে ঠাসা

বাংলাদেশ ব্যাংকে দায়িত্ব পালনকারী ১৩ জন ডেপুটি গভর্নরের মধ্যে অনেকেই জড়িত ছিলেন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম:

  • এসকে সুর চৌধুরী – বর্তমানে জেলহাজতে

  • মাসুদ বিশ্বাস – সাবেক বিএফআইইউ প্রধান, জেলে

  • এসএম মনিরুজ্জামান – ব্যাংক পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন

  • আবু হেনা মো. রাজী হাসান – তার সময়ে ব্যাপক অর্থপাচার হয়

  • আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাছের – ঋণ নীতিমালায় শিথিলতা এনে পুরো খাতকেই বিপর্যস্ত করে তোলেন

  • কাজী ছাইদুর রহমান – ডলার বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ

বর্তমানে দায়িত্বে থাকা নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সুপারিশে নিয়োগ পেয়েছিলেন নুরুন নাহার।

তদন্ত শুরু, রিপোর্ট সরকারের হাতে

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশে একটি তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেই অনুযায়ী একটি তালিকা প্রস্তুত করে সরবরাহ করেছি।”

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের পরপরই দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।

 

যে ব্যাংকখাত দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই চরম অনিয়ম ও লুটপাট আজ সরকার ও জনগণের চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে সেইসব কর্মকর্তাদের, যারা লুটপাটে সরাসরি জড়িত অথবা নীরব থেকে অপরাধে সহায়তা করেছেন।

No comments found