বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তিনটি স্থানে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেশকে 'আনস্টেবল' বা অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোতে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিরপুরের ফ্যাক্টরিতে ১৬ জনের মৃত্যু, চট্টগ্রামে ইপিজেডে অগ্নিকাণ্ড এবং সবশেষ বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় হওয়া ঘটনা—এই তিনটি স্থানই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, এই ধারাবাহিক নাশকতাগুলোর পেছনে কোনো না কোনো গোষ্ঠী দেশকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর আসা নির্বাচনের মুখোমুখি হওয়ার আগে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রুমিন ফারহানা বলেন, শুধু বিএনপি নয়, স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠজনরাও প্রায়ই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই নাশকতাগুলো বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস, বিশেষ করে রেমিট্যান্সের পর পোশাক শিল্পকে সরাসরি আঘাত করছে।
জুলাই সনদ সইয়ের দিনে সরকারের গভীর অবহেলা, অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতা ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। ২৫টিরও বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও, যারা সরাসরি মাঠে ছিলেন, তাদের এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তটি দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার পরিচায়ক।
তবে, দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রশ্নে তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগকেই এক নম্বরে রাখেন। তিনি যুক্তি দেখান যে, আওয়ামী লীগের জন্য এটা প্রমাণ করা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে তাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। অস্থিতিশীলতা দেখিয়ে বিশ্বকে এই বার্তা দেওয়া যে, আওয়ামী লীগের সময়কালে বড় কোনো আয়োজনের সামনে এমন ভাঙচুর বা সোয়াট বাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন হয়নি, এটাই আওয়ামী লীগের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ একটি ফেইল স্টেটের দিকে যাচ্ছে'—এটা এখন যদি সত্যিকার অর্থেই কেউ দেখানোর চেষ্টা করে, তবে সেটা আওয়ামী লীগই।
রুমিন ফারহানা মনে করেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দিতে পারলে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ফেব্রুয়ারির পর রাজনীতিতে না থাকলেও, আওয়ামী লীগ তাদের দল গোছানো এবং নতুন করে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হওয়ার জন্য মূল্যবান সময় পাবে।
দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ডে আঘাত এবং নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ—সব মিলিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।