বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আবারও যোগ হলো গর্ব করার মতো আরেকটি অধ্যায়। মাত্র ১৯ বছর বয়সে আর্চার আবদুর রহমান আলিফ ছিনিয়ে আনলেন এশিয়া কাপ আর্চারির দ্বিতীয় লেগের রিকার্ভ পুরুষ একক ইভেন্টের স্বর্ণপদক। সিঙ্গাপুরের বুকিত গমবাক স্টেডিয়ামে জাপানের মিয়াতা গাকুতোকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারিয়ে স্বর্ণ নিশ্চিত করেন এই তরুণ।
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এখনো ১৮০ নম্বরে থাকা আলিফ এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে শুধু নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক সোনা জয় করলেন না, বরং বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিলেন রোমান সানার পর আরেকটি আঞ্চলিক সাফল্য। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি আর্চার এশিয়ান পর্যায়ে সোনার পদক জয় করলেন।
ফাইনাল ম্যাচটি ছিল রীতিমতো রুদ্ধশ্বাস।
প্রথম সেটে আলিফ স্কোর করেন ২৮, গাকুতো ২৭ — শুরু থেকেই আধিপত্য। দ্বিতীয় সেটও এক ব্যবধানে আলিফের ঘরে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ সেটে ঘুরে দাঁড়ায় গাকুতো। ম্যাচ তখন ৪-৪ সমতায়।
আলিফ দেখান তীরন্দাজির আসল মুন্সিয়ানা—২৯ স্কোর করে গাকুতোর ২৬ পয়েন্টকে পেছনে ফেলে সোনার পদক নিশ্চিত করেন।
গত ১৬ জুন থেকে শুরু হওয়া এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আলিফ প্রথম রাউন্ডে ‘বাই’ পান।
এরপর চীনের আলিনকে ৬-২, মালয়েশিয়ার মুহাম্মাদ শফিককে ৬-৪, এবং চায়নিজ তাইপের লি কাই-ইয়েনকে ৭-৩ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছান।
সেমিতে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন চায়নিজ তাইপেরই চেন পিন-আন।
প্রথম সেটে ২৬-২৫ ব্যবধানে জয়, পরের দুই সেটে হারের পর দারুণ কামব্যাক—চতুর্থ সেটে ২৯-২৫ এবং পঞ্চম সেটে ২৮-২৭ জিতে পৌঁছে যান স্বপ্নের ফাইনালে
এই সোনাই আলিফের ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক একক পদক।
এর আগেও তিনি বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান গেমস, এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছেন—তবে সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি।
এই পদক তাকে শুধুই সফলতা দেয়নি, দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, সাহস ও দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তার জায়গা পাকাপোক্ত করার প্ল্যাটফর্ম।
১৫ জুন থেকে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিল ২১টি দেশ এবং ২১৩ জন প্রতিযোগী।
বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল ১১ জন (ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে)।
মোট ৩০টি পদকের লড়াইয়ে ভারতের ঘরে যায় ৯টি (২টি সোনা), ইন্দোনেশিয়ার ঘরে ৫টি (২টি সোনা),
আর বাংলাদেশের একমাত্র অর্জন এই আবদুর রহমান আলিফের সোনা!
আবদুর রহমান আলিফের এই জয় কেবল একটি সোনা জয়ের গল্প নয়,
এটি এক তরুণের অদম্য মানসিকতা, প্রতিশ্রুতি আর হার না মানা জেদ দিয়ে ইতিহাস গড়ার কাহিনি।
যেখানে প্রতিপক্ষ অনেক বড়, অভিজ্ঞ এবং শক্তিশালী হলেও আলিফ দেখিয়েছেন সাহসের আসল সংজ্ঞা।
বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে এমন সাহসী সাফল্য আরও অনেক দরকার।
আলিফের এই সোনা সেই সম্ভাবনার দরজা খুলে দিল—তীর আর ধনুকে লেখা হলো এক নতুন গর্বের গল্প!