ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫: গতকালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক হতাশা দেখা দিয়েছে। এবারের পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের বহু স্কুলে এমন নজিরবিহীন চিত্র দেখা গেছে যেখানে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। ২০২৪ সালে ফেলর হার ছিল ১৩.৪%। এবার তা বেড়ে ১৯.৭% হয়েছে। দেশের ৩০০-এর বেশি স্কুলে পাশের হার ০%। এই পরিস্থিতি শিক্ষাবিদদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
শিক্ষার্থীদের হতাশা:
ফলাফল হাতে পাওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মনে প্রচণ্ড হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে এই ব্যর্থতার জন্য পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ত্রুটি এবং শিক্ষকদের দিক থেকে গাইড না পাওয়াকে দায়ী করছেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা নিয়মিত ক্লাস করেছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন ছিল খুব কঠিন, আর অনেক উত্তর সঠিক লেখা সত্ত্বেও নম্বর কম এসেছে।' অন্যদিকে, শিক্ষকেরা মনে করেন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগের অভাবই এর প্রধান কারণ। একজন শিক্ষক জানান, 'শিক্ষার্থীরা এখন বই পড়ে না, মোবাইল-ইন্টারনেটেই বেশি সময় দেয়। নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিতি এবং পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়াই ব্যর্থতার বড় কারণ।'
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ:
একটি বেসরকারি জরিপে দেখা গেছে, ১৪-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মোবাইল/ইন্টারনেট আসক্তি সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, যা ৪৩% শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শিক্ষকদের অনুপ্রেরণার ঘাটতি ১৯%, সৃজনশীল পদ্ধতির জটিলতা ১৪%, পরিবারিক চাপ বা সমর্থনের অভাব ১১%, এবং টিউশন নির্ভরতা ও আত্মনির্ভরতার অভাব ৮% শিক্ষার্থীর আগ্রহ কমার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অন্যান্য কারণ যেমন অর্থনৈতিক সমস্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য ৫% শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্লেষণ ও করণীয়:
বর্তমান ফলাফল শিক্ষা ব্যবস্থার এক ভয়াবহ বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। পাঠ্যবই থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত ঘাটতি এই সংকট তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে হবে এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষাবিদরা সকলের যৌথ প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছেন। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়া এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।