রাজনীতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘিরে। নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যিনি প্রশ্ন তুলেছেন—জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘কার সুতোয়’ টান দিচ্ছেন?
রবিবার (৮ জুন) রাজধানীতে জাতীয়তাবাদী ভ্যান শ্রমিক ও রিকশা শ্রমিক দলের আয়োজনে ঈদ উপলক্ষে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন রিজভী। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস এমন একটি সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা দেশের মানুষের কাছে অর্বাচীন সিদ্ধান্ত বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এপ্রিলে দেশের আবহাওয়ায় খরতাপ চরমে থাকে। সেই সঙ্গে থাকে ঝড়-বৃষ্টি আর স্কুল-কলেজের পরীক্ষা। এর পাশাপাশি রোজার শেষ সময়ে জনগণ ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে। তখন নির্বাচন আয়োজন মানে হলো রোজা রেখে মানুষকে প্রচারে নামতে বাধ্য করা। এটা সরাসরি জনগণের কষ্টকে উপেক্ষা করার নামান্তর।”
রিজভীর বক্তব্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার আভাস ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, “আমরা জানতে চাই, ড. ইউনূস কেন এমন সময় নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছেন? তার পেছনে কি কারও বিশেষ পরামর্শ আছে? কার কথায় তিনি এমন অদ্ভুত সময় নির্বাচন চাচ্ছেন?”
তিনি অভিযোগ করেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র ও সংস্কারের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। তারা ক্ষমতায় এলেই চিরস্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। জনগণ প্রশ্ন তুলছে—এই সরকারের শরীরেও কি ‘দলীয় চিন্তার বঙ্কিম বাতাস’ বইতে শুরু করেছে?”
ভোটাধিকার হরণ এবং অতীত নির্বাচনগুলোর নির্লজ্জ অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “গত ১৫-১৬ বছর ধরে মানুষ নিজের ভোট দিতে পারেনি। ভোটের নামে একদলীয় নাটক চলেছে। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে দিয়েছে—এটা এখন ওপেন সিক্রেট।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন একটি দেশের গণতন্ত্রের প্রাণ। জনগণের যে দলকে বেশি সমর্থন করবে, সেই দলই ক্ষমতায় আসবে—এটাই নিয়ম। অথচ সেই নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনে আমাদের শত শত নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, অনেকে এখনো জেলে বন্দি।”
রিজভী আরও অভিযোগ করেন, “বিদেশে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, ‘একটি দল ছাড়া কেউ নির্বাচন চায় না’। অথচ তার জানা উচিত, সেই দলের জনভিত্তি কতটা নড়বড়ে। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, কিন্তু তিনি এপ্রিলে নির্বাচনের পক্ষ নিচ্ছেন কেন? সেটাই এখন প্রশ্ন।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুব ইসলাম ও ডা. জাহিদুল কবির। সভাপতিত্ব করেন ভ্যান শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জহির রায়হান। সঞ্চালনায় ছিলেন আফজাল হোসেন এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আরিফুর রহমান তুষার।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের সময় ঘিরে এখন থেকেই মতপার্থক্য শুরু হওয়া আগামী দিনের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ইঙ্গিত বহন করছে। তারা মনে করছেন, নির্বাচন যদি বাস্তবিক অর্থে সকল দলের অংশগ্রহণে হতে না পারে, তাহলে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে।
এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষ অবস্থান রক্ষা করাই হতে পারে দেশের গণতান্ত্রিক ধারার একমাত্র পথ। তবে রিজভীর মন্তব্যে রাজনৈতিক জল কতটা ঘোলা হলো, সেটি সময়ই বলে দেবে।