close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

এনটিআরসিএ ভবনের সামনে শিক্ষকদের লংমার্চ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শিক্ষা জাতীয়করণ, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতাসহ ২০% বাড়ি ভাড়ার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষকরা লংমার্চ করে এনটিআরসিএ ভবন ঘেরাও করেছেন। দাবি পূরণ না হলে ক্লাস বর্জনের কঠোর হুঁশিয়ারি।..

বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষক সমাজ তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ঐতিহাসিক লংমার্চ সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষা জাতীয়করণ, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশে উন্নীত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে শিক্ষকরা এই আন্দোলনে অংশ নেন। তাদের এই লংমার্চ এসে শেষ হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)-এর ভবনের সামনে, যেখানে তারা অবস্থান নিয়ে তাদের দাবিগুলো জোরালোভাবে উত্থাপন করেন।

শিক্ষকদের এই আন্দোলনের মূল দাবি হলো শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণ। দেশের ৯৭ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত জীবনে স্থিতি ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে বলে তারা মনে করেন। বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারের নীতিমালার অধীনে কাজ করলেও তারা সরকারি শিক্ষকদের মতো বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান না।

বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া এবং মাসিক মাত্র ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। শিক্ষকরা এই বৈষম্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই সময়ে তারা দাবি করেছেন যে, তাদের জন্য বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ এবং চিকিৎসা ভাতা কমপক্ষে ৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হোক। পাশাপাশি, তারা পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন, যা সরকারি শিক্ষকরা ভোগ করে থাকেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতারা সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে, যদি তাদের দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করা না হয়, তবে তারা ক্লাস বর্জনসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন। এই হুঁশিয়ারি দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে চরম অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এই শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।

এই লংমার্চ কর্মসূচিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশ নিয়েছেন। এনটিআরসিএ ভবনের সামনে জড়ো হওয়া শিক্ষকদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, ব্যানার এবং স্লোগানে তাদের দাবি-দাওয়ার কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছেন কেবল নিজেদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মান আদায়ের জন্য।

শিক্ষকদের এই লংমার্চ এবং আল্টিমেটামের ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক মহল মনে করছেন, শিক্ষকদের দাবিগুলো যুক্তিসঙ্গত এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্বিঘ্ন রাখতে দ্রুত সরকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই আন্দোলনে শিক্ষকরা একটি স্লোগানের মাধ্যমে তাদের মূল বার্তা তুলে ধরেছেন: "দাবি মানা না হলে, ক্লাসে ফিরবো না"। তাদের এই অবস্থান স্পষ্ট করে যে, তারা কেবল প্রতীকী আন্দোলন করছেন না, বরং দাবি আদায়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

শিক্ষক নেতারা উল্লেখ করেছেন, তারা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে একাধিকবার তাদের দাবিগুলো পেশ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা না হলে, মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী হবেন না, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মানকে নিম্নগামী করবে।

এই লংমার্চের প্রধান লক্ষ্য ছিল এনটিআরসিএ ভবন হলেও, এটি একটি প্রতীকী ঘেরাও কর্মসূচি। এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষকরা মূলত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়, বিশেষত প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। তারা প্রত্যাশা করছেন, বর্তমান সরকার তাদের দাবিগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করে দ্রুতই একটি ইতিবাচক ঘোষণা দেবে।

রাজনৈতিক তাৎপর্য: শিক্ষক সমাজের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দাবি নয়, বরং এটি শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করার একটি বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি পূরণ হলে দেশের অর্থনীতির ওপর কিছুটা চাপ পড়লেও, তা শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

نظری یافت نشد


News Card Generator