জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক নতুন অধ্যায় রচনা করলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। তারা ঘোষণা করেছে একটি নতুন আর্থিক ও তহবিল পরিচালনা নীতিমালা, যা দলীয় অর্থায়ন, ব্যয়ের স্বচ্ছতা এবং কর্মীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বুধবার (৪ জুন) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই নীতিমালার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে দলটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।
এনসিপি জানায়, তাদের এই নীতিমালার মূল লক্ষ্য হচ্ছে— প্রতিটি টাকার উৎস ও ব্যয়ের সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও আইনি কাঠামোর ভেতরে থাকা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অর্থের ন্যায্য ও সুসংহত বণ্টন নিশ্চিত করার লক্ষ্যও এখানে অন্তর্ভুক্ত।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলবে এনসিপি। অর্থাৎ, দেশের প্রচলিত আইনি কাঠামোর বাইরে গিয়ে কোনো ধরনের লেনদেন করা হবে না।
এনসিপি পাঁচটি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে, যা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরীক্ষাযোগ্য হবে:
সদস্যরা নির্ধারিত ফি দিতে পারবেন রশিদ, মোবাইল পেমেন্ট বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে।
“১০০ টাকা ক্যাম্পেইন” এবং “ছোট দান, বড় স্বপ্ন” কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ছোট ছোট দানকে বড় পরিবর্তনের পেছনে শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
টি-শার্ট, বই, প্রশিক্ষণ কোর্স এবং অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে আয় করা হবে।
দেশ-বিদেশের মানুষ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডিজিটাল রসিদ সহ অনুদান দিতে পারবেন। এতে বিদেশি প্রবাসীদেরও সম্পৃক্ত করা হবে।
শুধুমাত্র বৈধ ও নৈতিক উৎস থেকে যাচাই-বাছাই করে কর্পোরেট অনুদান গ্রহণ করা হবে।
কালো টাকা, অপরাধ সংশ্লিষ্ট অর্থ ও বিদেশি সরকারের অনুদান নিষিদ্ধ।
এনসিপি জানায়, প্রতিটি অনুদান থাকবে স্বয়ংক্রিয় রসিদ, অনলাইন এন্ট্রি ও ইউনিক আইডি সহ।
৫ হাজার টাকার বেশি দানে দাতার পরিচয় গোপন থাকলেও তা দলীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে।
সব লেনদেন হবে গুগল শিট/সফটওয়্যারে রেকর্ডকৃত
তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয়ভাবে অনুদানের অংশ পুনর্বণ্টন করা হবে।
বাজেট অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যয় অনুমোদনযোগ্য নয়।
ব্যয়ের জন্য থাকবে ছয় ধাপের অগ্রাধিকার পদ্ধতি।
জোর করে বা হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কেউ ইচ্ছে করলে “হুইসেলব্লোয়ার পলিসির” মাধ্যমে গোপনে অনৈতিক লেনদেন রিপোর্ট করতে পারবেন।
যে কোনো অনিয়মে শাস্তি, বরখাস্ত এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই কমিটিই দলের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড।
এখানে থাকবেন ৫ জন সদস্য— যাদের রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, অডিট, ব্যাংকিং, আইন ও প্রবাসী প্রতিনিধি হিসেবে অভিজ্ঞতা।
কোষাধ্যক্ষ হবেন কমিটির সভাপতি।
কমিটির মেয়াদ ২ বছর, সর্বোচ্চ ৩ বার পুনরায় দায়িত্বে থাকার সুযোগ থাকবে।
দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে:
-
বাজেট তৈরি ও অনুমোদন
-
তহবিল সংগ্রহ কৌশল (QR কোড, ইভেন্ট ফান্ডরেইজিং)
-
লেনদেন অনুমোদন ও পর্যবেক্ষণ
-
অডিট তদারকি (অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক)
-
নীতিমালা হালনাগাদ ও গোপনীয়তা রক্ষা
-
৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরুরি ব্যয় অনুমোদন
-
৬ মাস অন্তর রিপোর্ট প্রকাশ
-
৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলে পূর্ণ নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক
যেকোনো অভিযোগ শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে তদন্ত হবে।
এনসিপি মনে করে, টেকসই রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য পূর্ণকালীন সংগঠকদের ভাতা ও ফেলোশিপ প্রোগ্রাম থাকা আবশ্যক।
ফেলোদের দক্ষতা, দায়িত্ব ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী চার স্তরে শ্রেণিবিন্যাস করা হবে।
ভাতা নির্ধারণ হবে অঞ্চলভেদে জীবনযাত্রার ব্যয়ের ভিত্তিতে।
নেতাদের উদ্দেশ্য— যেন তারা নৈতিক আয় বজায় রেখে জনসেবায় মনোযোগ দিতে পারেন।
এই নীতিমালার মাধ্যমে এনসিপি বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা কেবল ভোটের রাজনীতি নয়, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলার রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
পুরো নীতিমালা পাওয়া যাবে তাদের ওয়েবসাইটে:
www.ncpbd.org/funding-policy.pdf