close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা আর স্বাধীন বাংলাদেশের পেছনে ছিল লাখো বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগ। কিন্তু এরই মধ্যে একটি ইতিহাস এখনও বাঙালির গর্বের গল্প হয়ে আছে—জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৬ শিক্ষার্থীর বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ।
সেদিন ওই স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির ৬৬ শিক্ষার্থী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করে তারা দেখিয়েছিলেন অসীম সাহস। তাদের মধ্যে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন এই স্কুলের তিন ছাত্র—বশির আহমেদ, নূর ইসলাম এবং মতিউর রহমান।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট:
জামালপুর জেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ধানুয়া কামালপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গন। পাশেই ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মহেন্দ্রগঞ্জ, যেখানে ছিল সেক্টর সদর দপ্তর। কৌশলগত কারণে ধানুয়া কামালপুরে ঘাঁটি গেঁড়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। এ রণাঙ্গন দখলের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের রক্তক্ষয়ী লড়াই চলে। এখানে পা হারান কর্নেল আবু তাহের এবং শহীদ হন ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজসহ অসংখ্য বীরযোদ্ধা।
৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী অবশেষে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পুরো এলাকা মুক্ত হয়ে ওঠে। এই বীরত্বপূর্ণ রণাঙ্গনে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধা।
স্কুলের ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়টি ছিল আশপাশের গ্রামের একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১১ নম্বর সেক্টর থেকে মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একে একে ৬৬ ছাত্র চলে যান ভারতের মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জে। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন এবং বীরত্বের পরিচয় দেন।
বশির আহমেদের অমর সাহসিকতা:
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে ৪ ডিসেম্বর কামালপুর পাকিস্তানি ক্যাম্পে আত্মসমর্পণের চিঠি পৌঁছে দেওয়ার সাহস দেখান বিদ্যালয়ের ছাত্র বশির আহমেদ। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হরদেব সিং ক্লের যখন জানতে চান কে চিঠি পৌঁছে দেবে, তখন কিশোর বশির নিজে এগিয়ে আসেন। চিঠি হাতে ক্যাম্পের সামনের রাস্তায় গিয়ে সাদা পতাকা নাড়ালেও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন তিনি। পাকিস্তানি বাহিনী তাকে বাংকারে ঢোকালেও শেষ পর্যন্ত তার মাধ্যমে আত্মসমর্পণের বার্তা পৌঁছে যায়। এরই মধ্যে মুক্তিবাহিনীর নতুন আক্রমণ ও মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পাকিস্তানি বাহিনী ভেঙে পড়ে এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
গর্বিত ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা:
ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, "আমরা গর্বিত যে এই বিদ্যালয়ের ৬৬ ছাত্র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখেছিল।" তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের ইতিহাস রক্ষা এবং আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নয়ন জরুরি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি বলেন, "এটি শুধু বিদ্যালয়ের নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয় যে একটি স্কুল থেকে এতজন ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।"
উন্নয়ন ও সংরক্ষণের দাবি:
বীরত্বের এই ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণে বিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি উঠেছে বারবার। দেশের জন্য এমন অবদানের স্মৃতি ধরে রাখতে এটি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেও স্থান পেতে পারে।
### উপসংহার:
ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৬ শিক্ষার্থীর এই আত্মত্যাগের গল্প আজও প্রেরণার উৎস। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার গৌরব যেন কখনও ম্লান না হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস তুলে ধরা এবং সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
कोई टिप्पणी नहीं मिली



















