কুমারখালীর ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসা করিম একাধিক প্রতিষ্ঠানে একই সঙ্গে চাকরি করে বেতন উত্তোলন করার গুরুতর অভিযোগে জড়িত হয়েছেন। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই বিদ্যালয় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নে অবস্থিত।
শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী এক ব্যক্তি একসাথে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা নিষিদ্ধ। তারপরও প্রধান শিক্ষক মুসা করিম একই সঙ্গে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে বেতন ভাতা তুলছেন বলে পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে তদন্তের পর নানান অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৩ সালে নন এমপিও কুমারখালীর ছেঁউরিয়া বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ২০১৫ সালে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। এ অবস্থায় ২০২২ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে নিয়োগ নিয়ে ঝিনাইদহের একটি মাদ্রাসায় যোগ দেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানে মে ও জুন মাসের বেতনও উত্তোলন করেন। শারীরিক অসুস্থতা ও দূরত্বের কারণে ২০২২ সালের জুনে ওই মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করেন।
তবে এরপরও অবৈধভাবে অতিরিক্ত বকেয়া বেতন উত্তোলনের জন্য ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে নিজের নিয়োগ দেখানো হয় ২০০৩ সাল থেকে। এছাড়াও নিয়োগ ছাড়াই প্রিয়া সুলতানা নামের এক নারীর নাম অফিস সহকারী হিসেবে শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেজে রাখা হয়েছে।
গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুল আলিম জানান, মুসা করিম ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পাঁচ মাস প্রতিষ্ঠানেই ছিলেন, বেতনও নিয়েছেন। এরপর জুনে পদত্যাগ করেন।
সরাসরি সরেজমিনে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “নন এমপিও বিদ্যালয়ে নিয়ম নেই, তাই একাধিক চাকরি করা যায়।” এছাড়া তিনি বলেন ব্যানবেজের তথ্য ভুল, ২০০৩ সাল থেকেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াই এক নারীর নাম অফিস সহায়ক হিসেবে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভুল করে নাম চলে গেছে, বর্তমানে সরানো হয়েছে।”
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন ৫ আগস্টের পর। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার পর প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, “এক ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা নীতিমালা বিরুদ্ধ। কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলেও তদন্ত করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলামও অভিযোগের বিষয়ে জানিয়ে বলেছেন, “প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়ম থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বর্তমানে এই অনিয়ম ও প্রশাসনের অবহেলার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও সঠিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে।



















