রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার পদ্মা নদীতে আবারও ধরা পড়ল বিশালাকৃতির এক কাতল মাছ, যা স্থানীয় ঘাট ও বাজারে তৈরি করল চাঞ্চল্য।
রোববার (২২ জুন) সকালে এই রূপালি দৈত্যকে নিজের জালে পেয়েছেন স্থানীয় জেলে সোনা হলদার। ২২ কেজি ওজনের মাছটি ধরা পড়ার পর তা নিয়ে শুরু হয় নিলামের হুলস্থুল।
সোনা হলদার জানান, তিনি প্রতিদিনের মতোই ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বের হয়েছিলেন মাছ ধরতে। কিন্তু পদ্মার বুকে হঠাৎই টান অনুভব করেন জালে। খানিক পরেই দেখা মেলে মাছটির—একেবারে বিশাল আকার, দেখে চোখ কপালে সকলের।
বেলা ১১টার দিকে মাছটি তিনি নিয়ে আসেন দৌলতদিয়ার ৫নং ফেরিঘাটে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন একাধিক মাছ ব্যবসায়ী। শুরু হয় মাছ ঘিরে প্রতিযোগিতা—কার হাতে উঠবে পদ্মার রত্ন!
শেষমেশ উন্মুক্ত নিলামে ২ হাজার টাকা কেজি দরে মাছটি ৪৪ হাজার টাকায় কিনে নেন স্থানীয় মৎস্য আড়তের মালিক সম্রাট শাহজাহান শেখ।
তিনি বলেন,মাছটি একদম ফ্রেশ ও বড়। আমি সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিই। পরে এটি সিলেটের শ্রীমঙ্গলের এক ক্রেতার কাছে ২ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে ৪৬ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করি।
এ নিয়ে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। অনেকে মাছটি এক নজর দেখতে ভিড় জমান ঘাটে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা জানান,পদ্মায় এখন পানির পরিমাণ বাড়ছে। ফলে বড় বড় মাছ নদীতে ঘোরাফেরা করছে। জেলেরা এসব মাছ ধরতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, এই মৌসুমে পদ্মা নদীতে প্রতি বছরই কিছু চমকপ্রদ আকৃতির মাছ ধরা পড়ে। তবে ২২ কেজির কাতল মাছ এক বিরল ঘটনা।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, এত বড় কাতল মাছ বহুদিন পর দৌলতদিয়ার ঘাটে এসেছে। তাদের মতে, পদ্মার মাছের স্বাদ যেমন চমৎকার, তেমনি এর চাহিদাও বাড়ছে দিনকে দিন।
যেখানে দেশের অনেক জায়গায় মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, সেখানে পদ্মা ও যমুনার মতো নদীতে বড় বড় মাছের উপস্থিতি এখনো মাছের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
এই ঘটনা শুধু জেলেদের নয়, গোটা অঞ্চলের মাছপ্রেমীদের মনেও এক ধরনের রোমাঞ্চ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি নদীতে মাছ সংরক্ষণ ও প্রজননে আরও গুরুত্ব দেয়, তাহলে পদ্মা নদী থেকেই তৈরি হতে পারে দেশের ‘মাছের ব্যাংক’।
আর ততদিন, হয়তো প্রতি মৌসুমেই দেখা মিলবে এমন বিশাল ‘রূপালি রত্ন’-এর, যা কোটি টাকার স্বপ্ন দেখাবে নদীর সন্তানদের।



















