close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

দূর থেকে বোঝেন মাহাথির, দেশে থেকেও বোঝেন না ইউনূস

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ডা. মাহাথির জানেন ইউনূস কী সমস্যায় আছেন, অথচ ইউনূস নিজেই জানেন না। বিপ্লবের ঐক্য দুর্বল, জাতি বিভ্রান্ত—নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন কি হারিয়ে যাচ্ছে?..

বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ, যিনি আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি হিসেবেই সমধিক পরিচিত, তিনি দূর জাপান থেকে আমাদের দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারলেও, এই দেশেই অবস্থানরত অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই যেন নিজের অবস্থান ও জনগণের প্রত্যাশা বুঝতে পারছেন না।

ডা. মাহাথিরের বয়স জুলাইয়ে শতবর্ষে পা দিচ্ছে। তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত একজন রাষ্ট্রনায়ক, চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তাঁর সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্ক বহু পুরোনো এবং অটুট। দুজনই মানবকল্যাণে নিবেদিত। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে মাহাথির সরাসরি বলেছেন, ইউনূস আজ সমস্যার মাঝে রয়েছেন—এই পরিস্থিতি বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক জটিলতার সৃষ্টি করেছে, তা বিশ্বমঞ্চেও প্রতিফলিত হচ্ছে।

২৯ মে জাপানে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ব্রিটিশ টিভি চ্যানেল ITV-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাহাথির খোলাখুলি জানান, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন সংকটে। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনাকে সরাতে জনগণ একসময় ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন কী ধরনের সরকার চায়, সে বিষয়ে কারো মধ্যে ঐক্য নেই। এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই বিপদের মূল।” এ বক্তব্য কোনো সাধারণ পর্যবেক্ষণ নয়, এটি একজন প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কের বিচার বিশ্লেষণ।

মাহাথিরের মূল্যায়নে আরও উঠে এসেছে—ড. ইউনূস এমন এক স্বার্থান্বেষী ঘেরাটোপে আটকা পড়েছেন, যার কারণে তিনি জাতির সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছেন। ছাত্র-জনতার ঐক্য ভেঙে যাচ্ছে, বিপ্লবের স্পৃহা দুর্বল হচ্ছে, এবং রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব আজ যেন ভার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার সময় জাতি আশা করেছিল, ড. ইউনূস হবেন নতুন বাংলাদেশের রূপকার।
রাষ্ট্র মেরামতের জন্য তাঁর সংস্কার কমিশন, ঐক্যমত্য বৈঠক, জাতীয় রোডম্যাপ—সবই জনগণের মাঝে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ১০ মাসেই সেই আশা ছিন্নভিন্ন। এখন তাঁর উপস্থিতিতেই রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। ঐক্যের বৃত্তে বিভাজনের রেখা স্পষ্ট।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আগামী মাসে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা হলেও তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা নেই। নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ছে। দখলবাজ, চাঁদাবাজ, সুবিধাবাদীরা আবারো সক্রিয়। বিপ্লবীরা হতাশ। জনগণের স্বপ্ন ভেঙে পড়ছে।

ড. মাহাথিরের মতো নেতা যে দূর থেকে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারেন, অথচ ইউনূস নিজেই বুঝতে পারছেন না—এই মর্মান্তিক বাস্তবতা জাতিকে আজ প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মাহাথির বলেছেন, “আমি তো আগেই বলেছিলাম আপনি সমস্যায় আছেন। আপনার সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আপনি কেন বুঝলেন না?”

মাহাথিরের জীবনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, কীভাবে একজন মানুষ সততা ও দূরদর্শিতায় একটি জাতিকে গড়ে তুলতে পারেন।
তাঁর মেডিকেল ক্যারিয়ার, ক্লিনিক চালানো, রাজনীতিতে পদার্পণ, শিক্ষামন্ত্রিত্ব, এবং অবশেষে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্ব—সবই ছিল পরিকল্পিত, প্রজ্ঞাপূর্ণ এবং নিষ্ঠায় পূর্ণ। তাঁর হাতে মালয়েশিয়া অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার ও আইনের শাসনে বিশ্বমানের রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। অথচ সেই মাহাথির এখন বাংলাদেশের অস্থির বাস্তবতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য—সব মিলিয়ে ছোট দেশগুলো চাপে পড়েছে। বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। জ্বালানি সংকট, জনশক্তি রপ্তানির সমস্যা, বৈদেশিক চাপ—সবই বাড়ছে। এই সংকটকালে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জনগণের আশার আলো দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন সেই আলো ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে।

মাহাথির যা দেখেছেন তা বাস্তবতার নিরিখে নির্মোহ সত্য। ড. ইউনূস যদি সত্যিই জনগণের কল্যাণে নিষ্ঠাবান হন, তবে তাঁকে এখনই সেই বিভ্রান্তির দেয়াল ভেঙে সামনে আসতে হবে। একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র রেখে যাওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে।
তা না হলে হয়তো ভবিষ্যতে ইতিহাস ড. ইউনূসকে নয়, বরং মাহাথিরকেই স্মরণ করবে—কারণ তিনিই আগে বুঝেছিলেন, কে আসলে সমস্যায় রয়েছেন।

Nenhum comentário encontrado