পিএসদের দুর্নীতির কাহিনী শুনলে বিস্ময়ে তিনবার ডিগবাজি দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা — এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (আজ) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। ‘ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি, মুক্তি কতদূর’ শীর্ষক এই সভায় রিজভী বলেন, “আজকের বাস্তবতা হলো, সরকারের উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত সহকারীদের (পিএস) দুর্নীতির মাত্রা এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, সেসব ঘটনা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানে পৌঁছায়, তাহলে তিনি বিস্ময়ে তিনবার ডিগবাজি খেয়ে ফেলবেন।”
তিনি সমালোচনার সুরে প্রশ্ন তোলেন, "একদিকে প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে, অথচ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা গুলো কেন এখনো ঝুলে আছে? কেন আমাদের মামলা গুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে না?"
রিজভী আরো বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশে ন্যায়বিচার নেই। সরকার শুধু নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী আইন ও নীতিমালা পরিচালনা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, “এটি প্রমাণ করে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী চায় তাদের আশ্রিত ব্যক্তিরা অপরাধ করলেও তারা মুক্ত থাকুক, আর বিরোধীদের জন্য যেন কারাগারের দরজা সবসময় খোলা থাকে।”
এছাড়া শিক্ষাঙ্গনের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “ছাত্রদের আসল কাজ ক্যাম্পাসের পাঠাগারে, ক্লাসরুমে। তাদের জায়গা কোনো মন্ত্রণালয়ে নয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কমিটি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ছাত্র সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে।”
তিনি আরো যোগ করেন, “সমাজের একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি ছাত্রদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তাদের বিপথগামী করছে। এভাবে তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে গোটা জাতির ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”
সভার আলোচনায় উপস্থিত বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। দুর্নীতি এখন শুধু মন্ত্রণালয়েই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তার শিকড় ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনেও।
তারা অভিযোগ করেন, এই দুর্নীতির হাত থেকে সাধারণ জনগণও মুক্তি পাচ্ছে না। শুধু সরকারি উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত সহকারীরাই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির পাহাড় তৈরি হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
রিজভী বক্তব্যের শেষদিকে বলেন, "দেশে গণতন্ত্র নেই, ন্যায়বিচার নেই, মানবাধিকার নেই। আজকের বাংলাদেশের জনগণ মুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জনগণের সেই চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে, প্রয়োজন বৃহত্তর আন্দোলন।"
সভা শেষে তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের দেশের প্রতিটি প্রান্তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।



















