মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে মন্তব্য করেছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি জানান, তার ও কিমের মধ্যে এখনো ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান। একইসঙ্গে তিনি উত্তর কোরিয়াকে আবারও ‘পারমাণবিক শক্তিধর’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যে বেশ কয়েকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে তারা কোরীয় উপদ্বীপে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তী বছর ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দ্বিতীয় সম্মেলন হলেও তা কোনো চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছায়নি।
এছাড়া, ২০১৯ সালে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত ডিমিলিটারাইজড জোন (DMZ) পরিদর্শন করেন এবং সেখানে কিম জং উনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ করেন। সে সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, উত্তর কোরিয়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে আগ্রহী। তবে পরবর্তীতে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে উত্তর কোরিয়াকে ‘পারমাণবিক শক্তিধর’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রসঙ্গে কিছু বাস্তবতা সামনে এসেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতেই দেশটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করে যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
উত্তর কোরিয়ার এই পারমাণবিক সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও, দেশটি তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার প্রশাসনের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আবারও উত্তর কোরিয়ার সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের চেষ্টা করবে, যেমনটি তিনি তার প্রথম মেয়াদে করেছিলেন।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাপানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ১৫ ফেব্রুয়ারি এক যৌথ বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি প্রতিহত করার বিষয়ে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশও এই পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে। রাশিয়া ও চীন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য নতুন উদ্বেগের বিষয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে দেখছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের সম্পর্ক এখনো দৃঢ় থাকলেও, বাস্তব পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো কোনো কার্যকর সমাধান খুঁজে পায়নি। ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক কোন পথে যাবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।