দিনাজপুরে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের জিম্মি করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা'র পোয়াবারো..

Abdus Sattar avatar   
Abdus Sattar
দিনাজপুর সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সদস্যাদের জিম্মি করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাবেক ইউপি সদস্য আমির আলী ও প্যানেল চেয়ারম্যানের কুসুমের যোগসাজসে হরিলুট কারবারের অভিযোগ উঠেছে।..

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে দিনাজপুর ১ নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আমির আলী ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ, কে, এম, হাসান নুর জামানকে আয়ত্বে নেয়। এরপর তারা প্যানেল চেয়ারম্যান মোছাঃ কুসুমের যোগসাজসে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সদস্যাদের জিম্মি হরিলুট শুরু করে।

 ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সদস্যারা ন্যায় সঙ্গত  কথা বললেই তাদের উপর শুরু করে মানসিক নির্যাতন। কথামত কাজ না করলে আমির আলী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ইউপি'র সদস্য ও সদস্যার বাড়ীতে গিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। 

ইউপি'র সদস্য সমাজ উদ্দীন জানান, রেজুলেশন বিহীন খাতায় স্বাক্ষর না করার কারণে সন্ত্রাসীরা ইউনিয়ন পরিষদের বাড়ান্দায়  তাকে লাঞ্চিত করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে ন্যায় সঙ্গত প্রতিবাদ করার কারণে সাবেক ইউপি'র সদস্য আমির আলী তার গডফাদারের সহযোগিতায় ইউপি  সদস্য মোঃ হানিফকে মিথ্যা মামলায় আসামী করে জেল হাজতে পাঠায়। গত ৩১ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখে দিনাজপুর সদরে ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ মে ২০২৪ তারিখে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জর্জিস সোহেলকে জেলা প্রশাসক শপথ গ্রহণ করান এবং নির্বাচিত ইউপি'র সদস্যদের শপথ গ্রহণ করান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। শপথ গ্রহন করার পর সদস্য ও সদস্যাদের নিয়ে চেয়ারম্যান  ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন । হঠাৎ ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারাদেশে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হয়। ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারাদেশে শুরু হয় আওয়ামী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা। সেই সুবাদে দিনাজপুর সদরে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার ঘটনায় নাম থাকায় জর্জিস সোহেল আত্মগোপনে থাকার ফলে ইউনিয়ন পরিষদটি চেয়ারম্যান শুন্য হয়ে পড়ে। উক্ত মামলা হওয়ার কারণে চেয়ারম্যান জর্জিস সোহেল উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়। চেয়ারম্যানের জামিন হওয়ার খবর পেয়ে ঐ স্বার্থান্বেষী কু-চক্রিমহলটি এলাকায় বলছে, তারা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় চেয়ারম্যানকে দেখা মাত্রই মব ও প্রাণনাশের ঘটনা ঘটাবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদর্শন করছে। সে কারণে চেয়ারম্যান জর্জিস সোহেল নিরাপত্তার অভাবে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে সাহস পাচ্ছে না।


ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সদস্যাগন অভিযোগ করে আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধি, অথচ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আমির আলী দুই জন যোগসাজস করে বলছে, আপনারা ইউনিয়ন পরিষদে এসে স্বাক্ষর দিয়ে মাসিক সম্মানী ভাতা নিয়া যাবেন। কিন্তু অন্য কোনো বিষয়ে আপদার করবেন না। ফলে পরিষদে কখন কি বরাদ্দ আসছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাবেক ইউপি'র সদস্য আমির আলী ও প্যানেল চেয়ারম্যান এই তিনজন ছাড়া ৪ জন জানেনা। এমনকি আমরা ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ কার্ড, মাতৃত্বভাতার কার্ড, বয়স্ক বা বিধবা ভাতা, টি আর, কাবিখা, কাবিটা ও টিসিবির কার্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। বর্তমানে আমরা আমির আলীর লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকীর ভয়ে জীবনের নিরাপত্তার অভাববোধ করছি। 


টিসিবির কার্ডে অর্থ লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ৬নং ওয়ার্ড ইউপি'র সদস্য পাভেল বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান মোছাঃ কুসুম তার বাড়িতে  আমাকে উপস্থিত রেখে টিসিবির কার্ড বিতরন করেছে। লোকজন তার কাছ থেকে টিসিবির কার্ড নেওয়ার সময় ৫০/১০০ টাকা করে দিয়েছে। এ সময় ৭০টি টিসিবি'র কার্ড বিতরন করা হয়। টিসিবি'র কার্ড প্রতি টাকা নেওয়ার বিষয়ে কে বা কারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে টিএনও  ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদেশ দেন। ফলে বিতরনকৃত টিসিবির কার্ডগুলো সংগ্রহ করে প্রশাসনিক কর্মকর্তার হাতে ইউপি সদস্য জমা দেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিজের হাতে টিসিবি'র কার্ডগুলো  বিতরণ করেন।

 সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা শিরিন আকতার জানায়, ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আমির আলীর হুমকি-ধামকির ভয়ে ফাঁকা চেকগুলিতে স্বাক্ষর দিয়েছি কিন্তু রেজুলেশনবিহীন খাতায় স্বাক্ষর দেয়নি। সে কারণে ইউনিয়ন পরিষদের  গডফাদারের কথা মতে আমির আলী তার দলের তাজেমুল ইসলাম, ইয়াছিন, আসলাম হোসেনের মাধ্যমে ২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার সড়কে চেয়ারম্যানসহ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, কাল্পনিক ও ভূয়া কথাবার্তা ব্যানারে লিখে মানববন্ধন করেছে।

 ইউপি'র সদস্য ও সদস্যাদের অনেকেই বলছেন, ৫ আগস্টকে পুজি করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাবেক ইউপি'র সদস্য সহ প্যানেল চেয়ারম্যান এই ৩ জন পরিষদের বরাদ্দকৃত মালামাল হরিলুট করে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার বাসনায় একের পর এক ধরনের নানা কুট কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। 

 ইউপি'র সদস্যা আয়েশা আকতার বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রমজান মাসে ৯,১২৬ টি ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ভিজিএফ কার্ড  কয়েকজন ইউপি'র সদস্য ও সদস্যাদের মাঝে বিতরন দেখিয়ে সিংহভাগ তারা আত্মসাৎ করেছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আমির আলীর চাপে পড়ে ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর দিয়েছি।  রেজুলেশনবিহীন খাতার অনেক জায়গায় স্বাক্ষর দিয়েছি। পরবর্তীতে আবারও একই কায়দায় চাপ সৃস্টি করলেও রেজুলেশনবিহীন খাতায় স্বাক্ষর  দেইনি। সে কারণে আমির আলীর লেলিয়ে দেওয়া  সন্ত্রাসী বাহিনী আমার বাসায় গিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা আমাকে রাজী করানোর জন্য আমার স্বামীকেও ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। তাদের ভয়ে আয়েশা আকতার এখন বাড়ী ছাড়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউপি সদস্য জানান সাবেক ইউপি'র সদস্য আমির আলী পরিষদের ৩টি রাস্তার কাজ করছে তা অনেকেরেই অজানা।আরও জানায়, ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ফটক সংলগ্ন ইউপি'র সাবেক সদস্য আমির আলীর মার্কেটসহ ভবনের ভিট দেওয়ার সময় পরিষদের আংশিক জমি দখলে নিয়েছে। সে ভুমিহীন না হওয়া সত্বেও  পরিষদ এলাকায় খাস জমি লীজ নিয়ে আলীসান বাড়িতে তার পুত্র বসবাস করছে। আমির আলী খুচরা ব্যবসায়ী থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। যা খতিয়ে দেখলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আমির আলী নাকি ইউনিয়ন পরিষদের স্ব-ঘোষিত চেয়ারম্যান সেজে বসেছে। 

এ বিষয়ে সাবেক ইউপি'র সদস্য আমির আলী জানান আপনার কি করার আছে করেন, এগুলো আমার হিসেব দেয়ার টাইম নাই।

  মুঠোফোনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোছাঃ কুসুমের কাছে জানতে চাইলে উভয়ে কোনো বক্তব্য দিবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন।

 

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের ভাগ বাটোয়ারার প্রায় ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে মোছাঃ কুসুম তার বাড়ির নির্মান কাজ শুরু করেছে। এবং পরিষদের টাকা দিয়ে ২৬টি গরু বিভিন্ন জনকে আদি দিয়েছে।  
তদ্রূপ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ, কে, এম, হাসান নুর জামান ইউনিয়ন পরিষদের লুটপাটের টাকা দিয়ে শহরে রামনগর ইন্দ্রারা মোড়ে এলাকায় ৫ তলা ভবনের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে।

ইউপি'র সদস্য ও সদস্যা বলেন, জানুয়ারী মাসে   টিআর, কাবিখা, গম/চাল যে পরিমাণ বরাদ্দ এসেছিলো, একই পরিমাণ বরাদ্দ  দেওয়া হয় মার্চ মাসে। এপ্রিলের বরাদ্দ গত পরশু বাতিল করেছে সরকার। গত জানুয়ারী মাসে টি আর ১১ লক্ষ টাকা,কাবিখা-১৩ লক্ষ টাকা, গম-৯ টন ৩০০ কেজি ও উন্নয়ন সহায়তা (BBG) ৯ লক্ষ ৪২ হাজার ৫০০ জানুয়ারি মাসের সমান বরাদ্দ আসে মার্চ মাসে। এপ্রিল মাসে টিআর কাবিখা গম/চাল বরাদ্দ বাতিল করে সরকার। যার প্রেক্ষিতে আগষ্ট ২০২৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫ বরাদ্দ। এছাড়াও  ইউনিয়ন পরিষদের টেক্স আদায় হয়েছে ।  প্রতি মাসে ৯টি করে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড  আসলেও অর্থের বিনিময়ে বিতরন হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ইউনিয়ন পরিষদে মাতৃত্বকালীন প্রায় শতাধিক ভাতার কার্ড আসে। এইভাবে ইউনিয়ন পরিষদে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার কোনো হিসেব নেই। এব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভুগী ইউপি'র সদস্য ও সদস্যা সহ এলাকাবাসী।

No comments found


News Card Generator