close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

দিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বৈঠক আজ: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই দিল্লিতে শুরু হচ্ছে উচ্চপর্যায়ের সীমান্ত বৈঠক। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কে যে শীতলতা তৈর
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই দিল্লিতে শুরু হচ্ছে উচ্চপর্যায়ের সীমান্ত বৈঠক। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কে যে শীতলতা তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটেই সোমবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছে। দ্বিবার্ষিক সীমান্ত বৈঠক: কী থাকছে আলোচনায়? আজ মঙ্গলবার বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে দ্বিবার্ষিক মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৫৫তম সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠক বিএসএফ সদর দপ্তরে হবে এবং এতে উভয় দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, সীমান্ত অপরাধ, এবং বিভিন্ন কৌশলগত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। উভয় দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএসএফ-এর মহাপরিচালক (ডিজি) দালজিত সিং চৌধুরী এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। এ ছাড়া, বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারেন বলে জানা গেছে। সীমান্তে আস্থার সংকট: ভারত কী বলছে? ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে আস্থার অভাব দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করেছে। এক ভারতীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, "সীমান্তে বিশ্বাসের অভাবের কারণে ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরকে দোষারোপ করছিল। তবে এই বৈঠকের মাধ্যমে সেই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।" ভারতের উদ্বেগ: কী আলোচনা হতে পারে? ভারত সীমান্ত বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশে সক্রিয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম। বিএসএফ সদস্যদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা। ভারতীয় নাগরিকদের ওপর বাংলাদেশি নাগরিকদের আক্রমণ। সীমান্ত অপরাধ দমন এবং একক সারির কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, "সীমান্ত অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করতে হবে যাতে (ভারতীয়) বাহিনী আরও কার্যকরভাবে সীমান্ত পাহারা দিতে পারে। তাই সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।" রাজনৈতিক পটভূমি: পাকিস্তান ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। ভারতীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, "শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক উষ্ণতা বাড়িয়েছে। এই পরিবর্তন ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভারত বিভিন্ন কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি তুলে ধরেছে।" ভারতীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন যে বাংলাদেশে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারত বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তের দৈর্ঘ্য ও গুরুত্ব ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা ভারতের পাঁচটি রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ২,২১৭ কিলোমিটার, ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৬ কিলোমিটার, মেঘালয়ের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার, আসামের সঙ্গে ২৬২ কিলোমিটার এবং মিজোরামের সঙ্গে ৩১৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই দীর্ঘ সীমান্তকে কেন্দ্র করেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি হয়। উপসংহার ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবস্থার কারণে দিল্লির এই সীমান্ত বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট নিরসন এবং সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের উপায় খোঁজার চেষ্টা করা হবে। তবে রাজনৈতিক পটভূমি এবং কৌশলগত স্বার্থের কারণে এই আলোচনার ভবিষ্যৎ ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
कोई टिप्पणी नहीं मिली