বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছিল, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ হয়তো টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গহিন এলাকায় বা মিয়ানমারে অবস্থান করে তার অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিল। কিন্তু বাস্তবে রাজধানীর উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তার গোপন আস্তানার সন্ধান মেলে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য ছিল এক চরম বিস্ময়ের বিষয়।
গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আতাউল্লাহ ও তার ৯ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাস ধরে সিদ্ধিরগঞ্জে বসবাস করছিলেন আতাউল্লাহ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ডিজিএফআই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
কীভাবে গা ঢাকা দিয়েছিল আতাউল্লাহ?
তদন্তে জানা যায়, আতাউল্লাহ নিজের পরিচয় গোপন করতে লম্বা চুল ও দাড়ি কেটে ফেলেছিল। সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি পল্লীতে ‘ট্রলার ব্যবসায়ী’ ও ‘মসজিদের ইমাম’ পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয় সে। মাসে ২০ হাজার টাকা করে ৫ মাসের অগ্রিম ভাড়া দিয়ে ৮ তলার ফ্ল্যাটে ওঠে। আশপাশের বাসিন্দাদের সাথে তার তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না।
ভবনের কেয়ারটেকার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আতাউল্লাহ পাঞ্জাবি, টুপি ও পাগড়ি পরে বের হতো এবং মাঝে মাঝে চিকিৎসার অজুহাতে বাইরে যেত। তার ফ্ল্যাটে নারী ও শিশু থাকলেও কেউ তাদের দেখতে পায়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যেত।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা
র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘‘আতাউল্লাহকে নারায়ণগঞ্জে খুঁজে পেয়ে আমরা অবাক হয়েছি। তবে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার ছিল বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।’’
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সক্রিয় রয়েছে। আতাউল্লাহ ধরা পড়েছে, ভবিষ্যতে আরও কেউ লুকিয়ে থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’’
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগ
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘‘সিদ্ধিরগঞ্জে আরসা প্রধানের অবস্থান নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।’’
আরসা সদস্যদের ময়মনসিংহেও গোপন আস্তানা!
নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি ময়মনসিংহেও আরসার সদস্যরা গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছিল। গত রোববার রাতে ময়মনসিংহ শহরের নতুনবাজার মোড়ে অভিযান চালিয়ে র্যাব চারজন আরসা সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা, স্বর্ণ, বিদেশি মুদ্রা এবং মিলিটারি শার্টসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
সেখানে অবস্থান করা সন্ত্রাসীরা নিজেদের পরিচয় গোপন করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের জাল কপি তৈরি করেছিল এবং মসজিদে নামাজ পড়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে সহজভাবে মিশে থাকার চেষ্টা করছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরবর্তী পদক্ষেপ
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান, ‘‘রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে।’’
আরসার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা রাজধানীর আশপাশে লুকিয়ে থাকা দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন সক্রিয় হওয়ায় এ ধরনের অপরাধীরা ধরা পড়ছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সন্ত্রাসীদের দমন করতে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।



















