close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ঢাকার উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ ও পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব: ডিসিসিআই আলোচনা সভায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান..

Mahamud Mithu avatar   
Mahamud Mithu
ঢাকার ক্রমবর্ধমান সমস্যার সমাধানে বিকেন্দ্রীকরণ এবং পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত।..

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'রাজধানী ঢাকার টেকসই উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ ও পরিবেশ সুরক্ষা' শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা ঢাকার ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলোর সমাধানে বিকেন্দ্রীকরণ এবং পরিবেশ সুরক্ষার উপর জোর দিয়েছেন। সভায় বক্তারা বলেন, ঢাকায় জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নদী দখল ও দূষণ, পলিথিনের উচ্চ ব্যবহার এবং যানজটের কারণে বসবাস ক্রমশই অসহনীয় হয়ে উঠছে। 

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'দেশের জলবায়ু পরিবর্তন ঢাকার বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে আরো প্রকট করছে। সারাদেশের টেকসই উন্নয়ন করতে হলে, তা সমাজ থেকে আসতে হবে, যেটা আমাদের মধ্যে বেশ অভাব রয়েছে।' তিনি ঢাকার আশেপাশের শহরগুলোকে স্যাটেলাইট শহর হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এছাড়া পলিথিন ব্যবহার কমাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের উপর তিনি জোর দেন। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশের জিডিপিতে ঢাকা শহরের অবদান ৪৫ শতাংশ। যদিও ২০২২ সালে বুয়েট পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় প্রতিদিন যানজটের জন্য ১৪০ কোটি টাকার কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, 'ঢাকার উপর চাপ হ্রাস ও বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক কাজে ঢাকার আশেপাশের শহরগুলোকে সেকেন্ডারি শহর হিসেবে তৈরি করতে হবে।' 

রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, 'টেকসই ঢাকা তৈরি করতে হলে পুরো বাংলাদেশকেই টেকসই করতে হবে, যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হিসেবে রাজধানী শহরের কোন বিকল্প উৎস নেই, এর উপর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এটা কমার সম্ভাবনা প্রতিফলিত হচ্ছে না।' 

স্থপতি ইকবাল হাবিব মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যেখানে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের নগর জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ রাজধানীতে বসবাস করলেও ঢাকার সবুজায়নের অভাব এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এখানকার জীবনযাপন হুমকির মুখে পড়েছে।' তিনি ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণে সুষম নগরায়ণ এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের উপর জোর দেন। 

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার উন্নয়নকে মহানগরের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে। 

রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, 'ঢাকার রাস্তায় যান্ত্রিক ও অ-যান্ত্রিক যানবাহন চলার কারণে অসহনীয় যানজট হয়ে থাকে, এর দ্রুত প্রতিকার প্রয়োজন।' তিনি রাজধানীর বাইরে সকল নাগরিক সুবিধা সম্বলিত স্যাটেলাইট শহর তৈরির উপর জোর দেন। 

বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, 'গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন না করে মেগা পরিকল্পনার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যয় বেড়েছে, যদিও তা জনগণের কাজে আসছে না।' দেশের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য সুষম পরিকল্পনার কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে ১২৫ কিলোমিটার খাল উদ্ধার করেছে এবং বৃক্ষরোপণ করেছে বলে জানান দিলবাহার আহমেদ। 

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, '৩টি রিং রোডের মাধ্যমে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাব হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।' ঢাকার চাপ কমাতে সাভার ও গাজীপুরকে স্যাটেলাইট শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উপর আহ্বান জানান তিনি। 

সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ কাজী গোলাম নাসির বলেন, '১ হাজার ৫২৮ বর্গ কিলোমিটারের ঢাকা শহরের পরিকল্পনার জন্য দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে।' 

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, 'ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত রয়েছে, তবে এর বাস্তব সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।' 

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডারবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

No comments found