close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ওজন স্কেলেই ধুঁকছে চট্টগ্রামের ব্যবসা: সিন্ডিকেটের দখলে যাচ্ছে বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনে ওজন স্কেলের ফাঁদে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। সীতাকুণ্ড ও দাউদকান্দির স্কেল যেন চট্টগ্রামের ব্যবসার বুকের ওপর পাথর! ব্যবসায়ীদের দাবি, সিন্ডিকেট ও ঘ..

ব্যবসার শিরায় বিষ ঢালছে দুই স্কেল—চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পথে নামতে বাধ্য হচ্ছেন!

চট্টগ্রাম বন্দর, যেটি বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এবং দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য সামলায়—আজ সেই বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসার প্রাণ ভরসা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিজেই হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীদের জন্য ভয়ংকর গলার কাঁটা।
বিশেষ করে মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও দাউদকান্দি অংশে বসানো ওজন স্কেল (Axle Load Control) এখন ব্যবসার অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই স্কেল দুটি শুধু ব্যবসার ক্ষতি করছে না, বরং বাইরের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিচ্ছে চট্টগ্রামের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। আন্দোলন, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন—কোনো কিছুর ফলেই মিলছে না স্থায়ী সমাধান।

তারা জানান, যেখানে দেশের ৩৫টি মহাসড়কের মধ্যে কেবল একটি অর্থাৎ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই রয়েছে ওজন স্কেল, সেখানে কেন শুধু চট্টগ্রামের পণ্যের ওপর এই নিয়ন্ত্রণ? এর পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।


 দ্বিগুণ পরিবহন ব্যয়, কমেছে প্রতিযোগিতা ক্ষমতা

একসময় একটি ট্রাকে যেখানে ১৮ থেকে ৩০ টন পণ্য পরিবহন করা যেত, এখন সেখানে সীমা ১৩ টনে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে, একই পরিমাণ পণ্য পরিবহন করতে এখন লাগে দুটি ট্রাক, যার মানে পরিবহন খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
এই অতিরিক্ত ব্যয় শেষ পর্যন্ত এসে পড়ছে ক্রেতার কাঁধে, যার ফলে অনেকেই চট্টগ্রাম থেকে পণ্য না কিনে অন্য উৎসে ঝুঁকছেন। এতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।

শুধু তাই নয়, পরিবহন ব্যয় বাড়ায় প্রতি কেজি পণ্যের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। দক্ষিণ চট্টগ্রামেও এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।


 ব্যবসায়ী নেতাদের ক্ষোভ: চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে পেছনে ফেলা হচ্ছে!

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মীর গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন,

“চট্টগ্রামে পণ্য বেশি খরচ হয় না, বরং এখান থেকেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এখন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা চলে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জসহ অন্যত্র। ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামে পণ্য আনলোড করতেই চান না।”

সংগঠনের আইনবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরও বলেন,

“২০১৭ সাল থেকেই আমরা প্রতিবাদ করে আসছি। কিন্তু কোথাও কোনো সাড়া নেই। এটা চট্টগ্রামের ব্যবসা ধ্বংসের একটি চক্রান্ত। অথচ দেশের কোথাও এমন স্কেল নেই, শুধু এখানেই আছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন,

“৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে ২০-৩০ টনের ট্রাকও স্কেল পার হয়ে যায়। আর সাধারণ ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে ক্ষতিগ্রস্ত হন।”


 সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে...

সীতাকুণ্ড সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারহান জানান,

“র‌্যাবমুন নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্কেল নিয়ন্ত্রণ করত, তবে এখন চুক্তি শেষ হয়েছে। আপাতত আমরা দায়িত্বে আছি, নতুন টেন্ডার মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

তবে কুমিল্লার দাউদকান্দির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাজমুল কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

স্কেল পরিচালনায় যুক্ত আরশেদ দাবি করেন,

“ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। এখানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে।”


সামনে আসছে আরও স্কেল!

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন জানিয়েছেন,

“এই দুই স্কেল তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের নয়, এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে আগামীতে রামগড়সহ সারা দেশে আরও ২৮টি স্কেল বসানো হচ্ছে, যার মধ্যে ১৪-১৫টির কাজ প্রায় শেষ।”


কী চায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ?

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এককথায় চান—এই স্কেল দুটি অবিলম্বে তুলে নেওয়া হোক।
তারা মনে করেন, এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতিই করছে না, বরং একটি নির্দিষ্ট এলাকা ও গোষ্ঠীর পণ্য বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়ক হচ্ছে।

সরকার যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে চট্টগ্রামের অর্থনীতিকে ঘিরে গড়ে ওঠা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তিও।

Aucun commentaire trouvé