ভূমিকম্পের মহা বিপদে বাংলাদেশ!
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কারণ, দেশটি তিনটি ভূমিকম্পপ্রবণ টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। সাম্প্রতিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশটির ভূগর্ভস্থ প্লেটগুলোর গতি বাড়ছে, যা বড় মাত্রার ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কিছু সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ ইন্ডিয়া প্লেট পূর্বদিকে এবং বার্মা প্লেট পশ্চিমদিকে ধাবিত হচ্ছে। এই সংঘর্ষের ফলে বিশাল পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে, যা যে কোনো সময় ভয়াবহ ভূমিকম্পের রূপ নিতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, যদি এই মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তবে ঢাকা শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, নগরীর অধিকাংশ স্থাপনা বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়নি।
প্রাণহানির আশঙ্কা কতটা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের ফলে ঢাকায় যদি মাত্র ১% ভবন ধসে পড়ে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। এছাড়া, ৫-৭ লাখ মানুষ ভবনের নিচে আটকা পড়বে। তাছাড়া, ভূমিকম্প-পরবর্তী দুর্যোগ যেমন অগ্নিকাণ্ড ও খাদ্য সংকটের ফলে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ভূমিকম্পের ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি
১৭৬২ সালে ‘গ্রেট আরকান আর্থকোয়েক’ এবং ১৮৯৭ সালে আসামের ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ইতিহাস আমাদের সতর্ক করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ও আশেপাশের এলাকায় ৪১টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৫৪টি।
সরকারি প্রস্তুতি কতটুকু?
২০০৮ সালে হাইকোর্ট ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্ধার কার্যক্রমের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত।
ভবিষ্যতে কী করণীয়?
অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ভূমিকম্প সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ অ্যাপ তৈরি করা হলে জনগণ সহজেই সতর্ক হতে পারবে। তাছাড়া, নিয়মিত মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে মানুষ দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।
বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রস্তুতি নিতে হবে, না হলে ভয়াবহ প্রাণহানির শিকার হতে পারে লাখ লাখ মানুষ। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক ভয়াবহ সংকটে রূপ নিতে পারে।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			