ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের অভিযোগে ছাত্রলীগের ১২৮ নেতাকর্মী সাময়িক বহিষ্কৃত হয়েছে। আরও তিন শতাধিকের বিরুদ্ধে চলছে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মোট ১২৮ জন নেতাকর্মীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, শারীরিক নির্যাতন ও দমনমূলক তৎপরতায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রোববার (২০ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তফসিল ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময়ই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্যানুসন্ধান কমিটি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে এখন পর্যন্ত ১২৮ জনকে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পাশাপাশি, অন্যান্য অভিযোগ যাচাই করতে আরও একটি নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার কাজ হবে পরবর্তী অভিযুক্তদের শনাক্ত করা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অভিযোগ গ্রহণের প্রথম ধাপে ২৫ জুন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় অভিযোগ গ্রহণের সময়সীমা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে অভিযোগের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলভিত্তিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় নিয়মিত নির্যাতন চালিয়ে আসছিল ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আরও তিন শতাধিক নেতাকর্মীর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব মামলায় সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একযোগে কাজ করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বহিষ্কার ও আইনি ব্যবস্থা একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে, অন্যদিকে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, দখলদারি ও গোষ্ঠীগত রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা দেবে।
ছাত্রদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, শিক্ষাঙ্গনে সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের অভাবেই এতদিন ছাত্র রাজনীতির নামে চলছিল অপব্যবহার।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, ক্যাম্পাসে যে-ই বিশৃঙ্খলা করুক না কেন, তার রাজনৈতিক পরিচয় দেখে নয়, অপরাধের প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ড যাতে আর না ঘটে, সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।