close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ঢাবির হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে : উপাচার্য

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Dhaka University VC Dr. Niaz Ahmed Khan reaffirmed the ban on student politics in residential halls. Students rejected the partial measure, demanding a complete end to political activities on campus.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান ঘোষণা দিয়েছেন, আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট নয় বলে জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আবারও স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা অপরিবর্তিত থাকবে এবং তা কার্যকর করতে হলে প্রতিটি হল প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

উপাচার্য বলেন, এই নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক হলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনুমোদনযোগ্য নয়, এবং স্ব স্ব হল কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে। তিনি আরও জানান, ছাত্রদলের নবঘোষিত কমিটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন। তবে শিক্ষার্থীরা তার এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আরও কঠোর অবস্থান নেন। তাদের দাবি—আবাসিক হলে শুধুমাত্র আংশিক নয়, বরং সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক ও একাডেমিক এলাকায় ছাত্ররাজনীতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দিতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেদিন রাতে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—
১. কেন নতুন কমিটি দেওয়া হলো, এ বিষয়ে উপাচার্যকে সরাসরি জবাব দিতে হবে।
২. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদল, শিবির, বাম সংগঠন, বাগছাসসহ হলে বিদ্যমান সকল গোপন ও প্রকাশ্য কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও একাডেমিক এলাকায় রাজনীতির সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ করে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের রূপরেখা প্রকাশ করতে হবে।
৪. সব হল কমিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিলুপ্ত করতে হবে।
৫. হল প্রভোস্টদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. দ্রুত ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হবে।

এই দাবিগুলো ঘিরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এর আগে শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের হল ইউনিটগুলোর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও আবাসিক পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে, তবুও ছাত্রদল কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

প্রথমে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা বিকেল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য হলে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বিক্ষোভের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, এবং রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে একত্রিত হন। সেখানে থেকে তারা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন।

একপর্যায়ে, শিক্ষার্থীদের চাপ ও ব্যাপক হট্টগোলের মুখে উপাচার্যের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে—২০২৪ সালের ১৭ জুলাই গৃহীত নীতিমালার আলোকে প্রকাশ্য ও গোপন উভয় ধরনের হল রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, কেবলমাত্র হলে নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি একাডেমিক ও প্রশাসনিক এলাকায়ও এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি সহিংসতা, দখলদারি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও কঠোর নীতি গ্রহণ করা। তবে ছাত্রদের একাংশ মনে করেন, রাজনীতি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ এবং তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ না করে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, হলে রাজনীতি বন্ধের বিষয়টি শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় কতটা কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কীভাবে মোকাবিলা করে—তা সময়ই বলে দেবে।

 

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি