রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শেখ হাসিনা দেশের অবস্থা ১২টা বাজিয়েছেন, আর অন্তর্বর্তী সরকার সেটিকে চব্বিশটা বাজিয়ে দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রমাণসহ দুর্নীতি ও লুটপাটের তথ্য তার কাছে আছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস শনিবার বিকেলে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে দেশের অবস্থা নাজুক করে দিয়েছেন, আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তাঁর ভাষায়, “দেশের অবস্থা শেখ হাসিনা ১২টা বাজিয়েছে, আর এ সরকার চব্বিশটা বাজিয়ে দিয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমার কাছে প্রমাণসহ অনেক তথ্য আছে—কোথায় কীভাবে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, কত কোটি টাকা লুট হয়েছে, কারা জড়িত ছিল—সবই জানা আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি সেসব প্রকাশ করতে চাই না। সময় এলে জনগণের সামনে সব তুলে ধরব।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের মদদপুষ্ট একটি দল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপিকে নানান অরাজকতার জন্য দায়ী করছে। “যেখানেই খুন, লুটপাট বা চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে, সেখানে বিএনপির নাম জড়ানো হচ্ছে। এতে আমাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
আলোচনা সভায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, “আপনাদের যেমন ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে, আমাদেরও আছে। তবে আমরা চাই জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে। ভোট পেলে আমরা ক্ষমতায় যাব, না পেলে মেনে নেব অন্যদের জয়। গত ১৭ বছর আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল মুখে নির্বাচনের কথা বললেও অন্তরে তা চায় না, কারণ তাদের ধারণা—সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে তারা নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে।
গণ-অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশ একবারই স্বাধীন হয়েছে—১৯৭১ সালে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এখন কেউ কেউ বলছে ৩৬ দিনের আন্দোলনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। এসব ভুল ধারণা ছড়িয়ে মূল ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা চলছে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার জরুরি। “যে-ই জড়িত থাকুক—প্রশাসনের লোক, সাধারণ মানুষ, শেখ হাসিনা কিংবা অন্য কেউ—বিচার হওয়া দরকার। বিচার শেষ হতে সময় লাগলেও নির্বাচন ও বিচার একসাথে চলতে পারে, এতে কোনো সমস্যা নেই।”
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি অভিযোগ করেন, “ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় এবং নির্বাচন বন্ধ করার মতো পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।”
জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শওকত আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম, জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হেলাল উদ্দীনসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। আলোচনা শেষে জাসাসের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।