দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শুধু মাঠের রাজনীতি নয়, দলটির সাইবার জগতেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বিশেষ বৈঠকে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার প্রক্রিয়া নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গণমাধ্যমকে জানান, "আমরা এখন পরিপত্র জারির অপেক্ষায় আছি। পরিপত্র জারি হলেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আনুষ্ঠানিকভাবে মেটা ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে জানাবে—আওয়ামী লীগের সব অনলাইন পেজ ও কার্যক্রম বন্ধ করতে।"
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলটি যেহেতু এখন পর্যন্ত বিচারাধীন এবং নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের তালিকাভুক্ত, তাই তার কোনো কার্যক্রমই আইনের চোখে বৈধ নয়। সেই কারণে শুধুমাত্র মাঠে নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও দলটির উপস্থিতি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশেষত ৫ আগস্ট দলের সভাপতি শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আওয়ামী লীগ তাদের অধিকাংশ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল অনলাইন মাধ্যমে। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার (বর্তমানে এক্স) সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা বক্তব্য, ভিডিও বার্তা, বিবৃতি প্রচার করে চলছিল। কিছু কিছু পোস্টে ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তিমূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে দলটির বিরুদ্ধে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অনলাইন চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট কীভাবে বন্ধ করা হবে?
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ভাষ্য অনুযায়ী, "বিটিআরসির মাধ্যমে যেসব আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কার্যক্রম চালায়, তাদের আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। মেটা, গুগলসহ সকলকে আইনি নির্দেশ দেওয়া হবে যাতে তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের পেজ ও চ্যানেল সরিয়ে দেয়।"
সরকারের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনার ঝড় তুলেছে। একটি সময় দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত দলটির এই পরিণতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করছে।
শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কতদূর গড়ায়, আদালতের রায় কী হয় এবং অনলাইন দুনিয়ায় আওয়ামী লীগের ছায়া কতটা নির্মূল করা সম্ভব হয়—তা সময়ই বলে দেবে।