close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
দেশব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কঠোর নির্দেশনা


বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ কাউকেই দেওয়া হবে না, দেশব্যাপী নিরাপত্তা বাহিনীকে যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
চলতি বছরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে বলেছেন, "কাউকে বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এই বছর দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।"
এ সময় তিনি পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেন, যেন তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা হয়। তিনি জানান, এই উদ্দেশ্যে একটি কমান্ড সেন্টার গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা বাহিনীগুলোর মধ্যে দ্রুত সমন্বয় সাধন করতে সাহায্য করবে।
বিশাল অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চক্রান্ত
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এবং তারা মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে। দেশের জনগণকে এসব অপপ্রচার থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং তাদের সতর্ক থাকতে হবে।"
এছাড়া, ইউনূস বলেন, "আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।" তিনি আরও জানান যে, একটি নতুন কমান্ড কাঠামো তৈরি করা হবে, যা বাহিনীগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন করবে।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
অধ্যাপক ইউনূস নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা মানবাধিকার সুরক্ষা ও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, "যদি আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে বৈশ্বিক ভাবমূর্তি আমাদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই বিষয়ে আমাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।"
চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান এবং অনলাইন এফআইআর সিস্টেম
অধ্যাপক ইউনূস পুলিশের কাছে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, "রমজান মাসে খাদ্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে, এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।"
এছাড়া, পুলিশের একটি নতুন উদ্যোগ হিসেবে, তিনি একটি অনলাইন এফআইআর সিস্টেম চালু করার নির্দেশ দেন, যার মাধ্যমে জনগণ সরাসরি থানায় না গিয়ে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। তিনি বলেন, "এটি মামলার প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং সাধারণ জনগণের জন্য সুবিধাজনক হবে।"
দ্রুত বিচার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
সভায় আইজিপি বাহারুল আলম জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার ঘটনায় ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে, যা এসব মামলার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার কাজ করবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল) এর কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ পাঠিয়েছে।
এছাড়া, সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), কোস্টগার্ড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিশেষ শাখার প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সকল বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা বাহিনীকে কার্যকর ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে, যেন কোন ধরনের অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খলা দেশের মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে না ওঠে।
Keine Kommentare gefunden