রাজনীতি মানেই কি শিষ্টাচার বিসর্জন? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক মহলে।
দীর্ঘ দেড় মাস ধরে নিজের প্রতি চলা লাগাতার ব্যক্তিগত আক্রমণ, অপমানজনক স্লোগান, এমনকি পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার মাঝেও নীরব থেকেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মুখ খুলেছেন—সরাসরি না, বরং নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক আবেগঘন ও ব্যতিক্রমধর্মী পোস্টে।
এত নোংরামি করার পরও গত দেড় মাসে একবারের জন্যও ভদ্রতার লাইন ক্রস করিনি। একবারও ব্যক্তি আক্রমণ করিনি কিংবা ছোট করে কথা বলিনি। এই বাক্যেই ফুটে উঠেছে তার ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক সহনশীলতা। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন—এই নীরবতা দুর্বলতা নয়, সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
আসিফ মাহমুদের এই পোস্টে রয়েছে একের পর এক প্রশ্ন, যা রাজনীতির মাঠে বড় ঝড় তুলতে পারে।
তিনি জানতে চেয়েছেন—
-
"আমার ছবিতে জুতা মারার জন্য কেউ কি ক্ষমা চেয়েছে?"
-
"গুজব ছড়িয়ে আমার বাবাকে চাল চোর বলা হলো, কেউ কি দুঃখ প্রকাশ করেছে?"
-
"নগর ভবন দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছে, কেউ কি দায় স্বীকার করেছে?"
প্রশ্নগুলো শুধু তার ব্যক্তিগত ক্ষোভই নয়, বরং রাজনৈতিক পরিবেশে দায়মুক্তির সংস্কৃতির প্রতি এক তীব্র প্রতিবাদ।
এই পোস্টে আসিফ মাহমুদ স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন ঢাকার সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রসঙ্গও।
তিনি বলেন, "ইশরাক হোসেন জানেন যে তাকে একটি ট্র্যাপে ফেলা হয়েছিল, ফর আ বেটার নেগোসিয়েশন।
তিনি আরো দাবি করেন, ইশরাক নাকি নিজেই পরিচিতদের কাছে এ সত্য স্বীকার করেছেন।
আসিফের মতে, আন্দোলনটি প্ররোচিত ছিল, এবং এ বিষয়ে তিনি সত্যটি বলেছেন। কিন্তু সেই সত্য বলার কারণে আজ তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হচ্ছে।
পোস্টের শেষাংশে আসিফ মাহমুদ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, "ইতিহাস সবাইকেই যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়।"
এই বাক্য যেন এক সতর্ক বার্তা—সত্যকে দমিয়ে রাখা যায় না, আর ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে।
তার পুরো বক্তব্য জুড়ে ছিলো একদম পরিশীলিত ভাষা, কিন্তু সেখানে ছিলো না কোনো আত্মসমর্পণ। বরং ছিলো আত্মসম্মান আর রাজনৈতিক শালীনতার পরিচয়।
এই পোস্টের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিগত আক্ষেপ নয়, আসিফ মাহমুদ একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন গোটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকে—
রাজনীতিতে কি এখনো ভদ্রতার কোনো স্থান আছে?
যেখানে একের পর এক ব্যক্তিগত আক্রমণ, গুজব, অপমান, এমনকি মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়, সেখানে ধৈর্য ধরে চুপ থাকা কি দুর্বলতা, নাকি নৈতিক শক্তির চূড়ান্ত পরিচয়?
রাজনীতির মাঠে এই পোস্টের অভিঘাত কতটা হয়—তা সময় বলবে। তবে আসিফ মাহমুদের এই পোস্ট স্পষ্ট বার্তা দিল, তিনি এখন আর চুপ করে থাকার নয়, জবাব দেওয়ার সময় এসেছে।