close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

চুরি যাওয়া সোনার গহনা পরে টিকটকে স্ত্রী, গ্রেফতার স্বামী

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
স্ত্রীর টিকটকে ধরা পড়লো চুরি করা গহনা, সেখান থেকেই ট্র‍্যাকিং—শেষমেশ পুলিশের জালে স্বর্ণচোর সোহেল। জানুন পুরো ঘটনার নাটকীয় মোড়!....

স্বর্ণ চুরির মতো মারাত্মক অপরাধে জড়িত সোহেল মিয়া শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লেন টিকটকে স্ত্রীর ভিডিওর কারণে! চুরি করা গহনা পরে তার স্ত্রী যখন টিকটক করছিলেন, তখনই প্রযুক্তির চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি সোহেল। সেই ভিডিওর সূত্র ধরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে। এই ঘটনাটি বর্তমানে স্থানীয়ভাবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

গ্রেফতার হওয়া মো. সোহেল মিয়ার বয়স ২৯। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চন্দ্রনাইল গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে। গত ২ জুলাই ভোরে তাকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেন দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সোহেল মিয়া একটি সুসংগঠিত চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য। বিভিন্ন সময় তিনি নানা এলাকায় গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে আশপাশের স্বর্ণের দোকান চিহ্নিত করতেন। পরে সুযোগ বুঝে সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় সেই দোকানে চুরি করতেন। এসব চুরির স্বর্ণালঙ্কার তার স্ত্রী শাহীন আক্তার শাহীন ব্যবহার করতেন, এবং প্রায়শই সেগুলো পরে ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতেন।

এভাবেই পুলিশের নজরে আসে চুরি যাওয়া সোনার গহনা। সোহেলের মোবাইল ফোন ট্র‍্যাক করে পুলিশ তার স্ত্রীর ভিডিও বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়, সেগুলোই চুরি হওয়া গহনা। এরপরই পুলিশের দল ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৬ মে, কুমিল্লার দেবিদ্বার নিউমার্কেট কলেজ রোডের বারেক প্লাজার পূর্ব গলির খাদিজা শিল্পালয়ে। জুমার নামাজ শেষে দোকান মালিক মো. জাকির হোসেন দোকান খুলতে গিয়ে দেখতে পান, তার দোকানের তালা নেই। ভিতরে ঢুকে হতবাক হন—শো-কেস খালি! প্রায় ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিখোঁজ।

সেদিন সন্ধ্যাতেই কুমিল্লার ইপিজেড এলাকায় চুরি হওয়া সোনা বিক্রির সময় আবু তাহের (৩০) ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৫) পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোনা চোর সিন্ডিকেটের প্রধান আবুল কাসেমকে মুরাদনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে সোহেল মিয়ার নাম—যিনি ছিলেন এই চক্রের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, এখন পর্যন্ত সোনা চোর সিন্ডিকেটের চারজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম মো. সোহেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তির ব্যবহার করে আমরা দ্রুত অপরাধীকে শনাক্ত করতে পেরেছি। অপরাধীরা যতই চালাক হোক না কেন, ডিজিটাল ট্র‍্যাকিং থেকে পালানো কঠিন।

এক সময়ের মজার টিকটক এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে সোহেলের জন্য সর্বনাশের কারণ। স্ত্রীর অজ্ঞতাতেই হোক বা আত্মবিশ্বাসে, চুরি করা গহনা পরে ভিডিও তোলা ছিল এক বিশাল ভুল। সেই ভুলই পুলিশকে এনে দেয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।

এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে। অনেকেই মন্তব্য করছেন—“চুরি করে বুদ্ধি খাটিয়ে লুকাতে পারলেও, স্ত্রীর সাজগোজ আর ভিডিও ভালোবাসা থেকেই তো শেষ পর্যন্ত ধরা!

এই ঘটনা শুধু একটি স্বর্ণচুরির গল্প নয়। এটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, অপরাধ করে কেউ চিরকাল ধরা না পড়ে থাকতে পারে না—বিশেষ করে ডিজিটাল যুগে। অপরাধের পেছনে প্রযুক্তি যেমন কাজ করে, ঠিক তেমনি তা অপরাধী শনাক্তেও হয়ে উঠছে শক্তিশালী হাতিয়ার।

کوئی تبصرہ نہیں ملا