close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

চট্টগ্রামে রাজনৈতিক উত্তাপ: সরকার পতনের পর বাড়ছে অপরাধ, ঢাকামুখী গোপন প্রস্তুতিতে আওয়ামী নেতাকর্মীরা!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকার পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ বাড়ছে। বাড়ছে হত্যা, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি। গোপন গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সাবেক ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গোপনে ঢাকামুখী হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি ন..

সরকার পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সহিংসতা। পুলিশের মনোবলে প্রথমদিকে ধস নামায় অপরাধীরা সুবিধা নিচ্ছে, এবং পরিস্থিতি দ্রুত উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে।

এদিকে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে আসা একাধিক তথ্য থেকে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে দলবদ্ধভাবে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই গোপন সফরের পেছনে রয়েছে ঢাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলনের প্রস্তুতি।

এই প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য সংঘাত ও অরাজকতা রোধে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেলার প্রতিটি থানাকে পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা— যেখানে অপরাধ দমন ও রাজনৈতিক উত্তেজনা মোকাবিলায় ৮ দফা কৌশলগত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সহিংসতা ও জমি দখলের মতো অপরাধে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে মনোবলহীনতার সুযোগে এসব অপরাধ প্রবলভাবে বেড়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় দলের শক্তি প্রদর্শনের জন্য কর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই তথ্য ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। পুলিশ এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে মাঠপর্যায়ে সতর্কতা জারি করেছে।

চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিএসবি) ৯ এপ্রিল বুধবার জেলার সব থানায় একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে পুলিশ সদস্যদের জন্য দেওয়া হয় ৮ দফা নির্দেশনা, যার মধ্যে রয়েছে—

  • সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নজরে রাখা,

  • যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের মোবাইল ট্র্যাক করে অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তার,

  • গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো,

  • নৌঘাট, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে বাড়তি নজরদারি,

  • বিএনপি ও জামায়াতপন্থিদের সহায়তায় ঢাকামুখী যাত্রা প্রতিহত করা,

  • সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট পর্যবেক্ষণ,

  • অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ,

  • ভাড়ায় চালিত গাড়ি ও স্ট্যান্ডগুলোর কার্যক্রম নজরদারির আওতায় আনা।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) মোহাম্মদ রাসেল বলেন, “সরকার পরিবর্তনের প্রাথমিক সময়টায় কিছুটা ধাক্কা লাগলেও বর্তমানে পুলিশের মনোবল ফিরে এসেছে। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং অপরাধে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।”

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম জানান, “নগরীতে নতুনভাবে চেকপোস্ট বসানো, নাইট পেট্রোল বৃদ্ধি এবং মিনি টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।”

চট্টগ্রাম ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জুনায়েত কাউছার বলেন, “নির্দিষ্ট কোনো চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছি না, তবে যেকোনো হুমকি বা গুজবে আমরা নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নিই। পুলিশ সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত রয়েছে।”

ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর আহমদ বলেন, “৫ আগস্টের পর চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ এখন দৃঢ়তা নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। রাজনৈতিক দিকটি আমাদের কাজের আওতায় না থাকলেও যেকোনো অপরাধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার বলেন, “জনগণের সহযোগিতায় পরিস্থিতি আমরা ভালোভাবে সামাল দিতে পারছি। পুলিশের মনোবল ফেরত এসেছে। যেসব জায়গা থেকে অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব বিবেচনায় নিয়েই আমাদের কাজ চলছে।”

সার্বিকভাবে, চট্টগ্রামে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্বাস ও তৎপরতা নাগরিকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়েছে।

No comments found