close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র: উন্নয়নের বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য যুদ্ধ ও জাতির সামনে বিকল্প পথ....

Bokhtiar Shamim avatar   
Bokhtiar Shamim
এই লেখাগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের তহবিলে লেখা হয়নি, লেখা হয়নি পছন্দের কোনো রাজনৈতিক আদর্শে—এই লেখা এসেছে একজন বিবেকবান মানুষের ভিতর থেকে। সেই মানুষটি বখতিয়ার শামীম—যিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের বুকে থাকা..

শিরোনাম:

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র: উন্নয়নের বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য যুদ্ধ ও জাতির সামনে বিকল্প পথ

১. চট্টগ্রাম বন্দরের শত্রুরা কারা: গোপন সিন্ডিকেটের মুখোশ উন্মোচন ও জাতীয় স্বার্থে ষড়যন্ত্রের এক নিখুঁত ছক — পর্ব ১

২. চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নের রূপরেখা ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী বিশ্লেষণ — পর্ব ২

৩. চট্টগ্রাম বন্দর: যে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ভাগ্য লিখতে পারে – রোডম্যাপ ও লজিস্টিক হাবে রূপান্তরের আবেগঘন প্রতিচ্ছবি — পর্ব ৩

৪. চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র: উন্নয়নের বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য যুদ্ধ ও জাতির সামনে বিকল্প পথ — পর্ব ৪

 

প্রতিবেদনটি শুরু:

চট্টগ্রাম বন্দর—একটি দেশের বুকে গড়ে ওঠা প্রবল সম্ভাবনার প্রবেশদ্বার, একটি জাতির অর্থনৈতিক শিরা, যেখানে প্রতিদিন ভিড়ে জাহাজ, আসে পণ্য, গড়ে ওঠে স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্নের নিচে জমে উঠছে এক অন্ধকার ইতিহাস, যেখানে সিন্ডিকেট, দালালচক্র আর ক্ষমতালোভী গোষ্ঠীর হাত ধরে বন্দরটা দিনকে দিন যেন হয়ে উঠছে আটকে থাকা সময়ের প্রতিচ্ছবি। উন্নয়ন যেখানে দরজায় কড়া নাড়ছে, সেখানে দরজায় তালা ঝুলিয়ে রেখেছে একদল সুবিধাভোগী। তারা চায় না উন্নয়ন আসুক। তারা চায় না বন্দর আধুনিক হোক। কারণ আধুনিকতা মানেই স্বচ্ছতা, আর স্বচ্ছতা মানেই—তাদের অবৈধ রাজত্বের পতন।

এই প্রতিবেদন শুধু গুজবের জবাব নয়, এই প্রতিবেদন হলো জাতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো—কীভাবে চট্টগ্রাম বন্দর আজ একটি অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কীভাবে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে রেখেছে, আর উন্নয়নের নামে ছড়াচ্ছে ভয়, বিভ্রান্তি, ষড়যন্ত্র। যারা বলে ‘বিদেশিরা এলেই দেশ চলে যাবে’, তারা আসলে ভয় পায় যে—বিদেশিরা এসে তাদের চাঁদাবাজির পথ বন্ধ করে দেবে। যারা বলে ‘বাঙালির চাকরি যাবে’, তারা জানে—মেশিন যখন হিসাব করে কাজ দেয়, তখন চেনাজানা, দালালি, তদবির—এসব আর চলে না।

চট্টগ্রাম বন্দর আজও ম্যানুয়াল প্রসেসে চলে, যেখানে একটি কনটেইনার খালাসে লাগে ৪–৫ দিন, যেখানে শ্রমিক নিয়োগ হয় ফোনে, আর ট্রাক লাইনের বরাদ্দ চলে ‘উপরের নির্দেশে’। অথচ বিশ্বে এখন বন্দরে প্রবেশ করে কনটেইনার, স্ক্যান হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে, ছাড় হয় ঘণ্টার মধ্যে। উন্নত বন্দর মানে শুধু জাহাজের গতি নয়, অর্থনীতির গতি। আর ঠিক এখানেই ভয় সেই দালালদের। কারণ উন্নয়ন এলে তাদের আর প্রয়োজন থাকবে না। তারা হারাবে আয়, হারাবে নিয়ন্ত্রণ, হারাবে ‘মাটির নিচের সরকার’ চালানোর ক্ষমতা।

বিদেশি প্রতিষ্ঠান যেমন PSA (সিঙ্গাপুর), DP World (দুবাই), APM Terminals (ডেনমার্ক)—তারা এসেছে সারা বিশ্বের বন্দরে নতুন প্রযুক্তি, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিয়ে। তারা বন্দর চালাতে আসে, দেশ দখল করতে না। শ্রীলঙ্কা, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এমনকি আফ্রিকার অনেক দেশ ইতিমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে লাভবান হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্যও এর চেয়ে বড় সুযোগ আর আসবে না। শুধু সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা সাহস করবো কিনা।

সিন্ডিকেট জানে, এই সাহসটা একবার দেখালে তাদের জায়গা থাকবে না। তাই তারা মিডিয়া কিনে ফেলে, সংবাদ বিকৃত করে, ভয় দেখায়। কিছু তথাকথিত ‘দেশপ্রেমিক’ হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বানায়, পোস্ট করে, কান্নাকাটি করে—বলা হয় ‘বন্দর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে’। অথচ বিক্রি হচ্ছে না বন্দর, বিক্রি হচ্ছে না বাংলাদেশের স্বার্থ। বরং বিক্রি হতে বসেছে আমাদের ভবিষ্যৎ, যদি আমরা এদের থামাতে না পারি।

চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন মানে শুধু মাল ওঠা-নামার গতি না, এর মানে কর্মসংস্থান, ট্রানজিট বাণিজ্য, আঞ্চলিক নেতৃত্ব, এবং দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই বন্দর হয়ে উঠতে পারে নেপাল, ভুটান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ট্রেড গেটওয়ে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান এলে তারা প্রশিক্ষণ দেবে, দক্ষতা বাড়াবে, জবাবদিহি আনবে। তাতে আমাদের শ্রমিক বেকার হবে না, বরং তারা হবে আন্তর্জাতিক মানের শ্রমিক—যারা কেবল দেশের না, রপ্তানি হয়ে যাবে বিশ্বের উন্নত বন্দরেও।

আজ প্রশ্ন একটাই—আমরা কি চট্টগ্রাম বন্দরকে আটকে রাখব ‘দালালদের আবেগ’ আর মিথ্যা ভয় দেখিয়ে? নাকি এগিয়ে যাবো সাহসিকতার পথে, যেখানে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার লজিস্টিক সেন্টার? একটি জাতি তখনই বড় হয়, যখন সে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, নিজের ভবিষ্যৎ নিজে লেখে। পদ্মা সেতু তাই প্রমাণ করেছে, রূপপুর সেটা বলেছে, বঙ্গবন্ধু টানেল সেটা দেখিয়েছে। এখন সময় চট্টগ্রাম বন্দরের। এখন সময় সিন্ডিকেটের মুখোশ খুলে দেওয়ার। এখন সময় সত্যের পাশে দাঁড়ানোর।

কারণ, বন্দর যদি আধুনিক হয়—উঠে দাঁড়াবে শুধু এক কাঠামো নয়, জেগে উঠবে একটি জাতি। থেমে যাবে যদি এই উন্নয়ন, থেমে যাবে আগামী প্রজন্মের গতি। এখন সিদ্ধান্ত আমাদের—আমরা কি গুজবে ভাসব, না বাস্তবতায় দাঁড়াবো?

 

লেখক পরিচিতি

বখতিয়ার শামীম—নামেই যেমন আত্মবিশ্বাস, লেখাতেও তেমনি স্পষ্টতা, যুক্তি আর একরাশ নীরব প্রতিবাদ। তিনি একাধারে লেখক, কবি, গল্পকার, উপন্যাসে গবেষক, এবং দর্শনচিন্তায় মনোনিবেশ করা একজন ফিলোসফার। তাঁর কলম কেবল শিল্প সৃষ্টি করে না, সমাজকে প্রশ্ন করে, আলোড়িত করে, ধাক্কা দেয় আর দরকার হলে—আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

বখতিয়ার শামীম কাগজে-কলমে শুধু একজন সাহিত্যিক নন, তিনি একজন মানবাধিকারকর্মী, সমাজ পর্যবেক্ষক এবং সফল ব্যবসায়ী। জীবন দেখেছেন নানা দিক থেকে—রাজপথে, প্রান্তরে, ব্যবসার টেবিলে, আবার শব্দের ভেতরে। তাই তাঁর বিশ্লেষণে থাকে বাস্তবের মাটি, অভিজ্ঞতার ছাপ, আর একরাশ দায়বদ্ধতা।

চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে দালাল সিন্ডিকেটের অদৃশ্য ক্ষমতা, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, এবং উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র—এই সবকিছুর বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি এই সিরিজটি লিখেছেন একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের আত্মিক প্রেরণা থেকে। তাঁর কাছে লেখা মানে শুধু তথ্য উপস্থাপন নয়—মানুষকে নাড়া দেওয়া, প্রশ্ন তুলতে শেখানো, আর সাহসের সঙ্গে সত্য বলা।

 

তিনি মনে করেন—

 

> “সিন্ডিকেট যখন দেশ চালায়, তখন লেখকের কলম থেমে থাকা মানে অপরাধ।”

এই লেখাগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের তহবিলে লেখা হয়নি, লেখা হয়নি পছন্দের কোনো রাজনৈতিক আদর্শে—এই লেখা এসেছে একজন বিবেকবান মানুষের ভিতর থেকে। সেই মানুষটি বখতিয়ার শামীম—যিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের বুকে থাকা চট্টগ্রাম বন্দরটি শুধু লোহার কাঠামো নয়, এটি দেশের ভবিষ্যতের প্রবেশদ্বার।

 

Комментариев нет