ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এখন শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনেও তার ভয়াবহ প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া শুক্রবার জানায়, তারা তেহরানে অবস্থিত তাদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ সিদ্ধান্ত এসেছে এমন সময়ে, যখন ইরানের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, অস্ট্রেলিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের দ্রুত ইরান ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে অনেক কর্মকর্তা তেহরান ত্যাগ করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক বিবৃতিতে জানান, ‘‘ইরানে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত স্থানীয় অঞ্চলেই থাকবেন, যেন সংকট পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।’’ তবে তিনি সরাসরি সতর্ক করেছেন যে, পরিস্থিতি যতটা জটিল, তা প্রকাশ্যে আসছে না—আসন্ন সময়ে যে কোনো বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
তিনি আরও জানান, ইরানে অবস্থানরত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা ইরান ত্যাগ করতে চান, তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
তেহরানে দূতাবাস বন্ধের পরপরই অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ আজারবাইজান সীমান্তে বিশেষ কনস্যুলার কর্মী মোতায়েন করেছে। তাদের কাজ হবে ইরান থেকে আজারবাইজান হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার ইচ্ছুক নাগরিকদের সহায়তা প্রদান। ইতিমধ্যেই কয়েকটি ‘হটলাইন’ চালু করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রে আরও জানা যায়, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যাতে যাত্রাপথে কোনো অজানা ঝুঁকি বা জটিলতা সৃষ্টি না হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই পথেই বেশিরভাগ উদ্ধার তৎপরতা চালানো হবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একটি বড় বাস্তবতা—মধ্যপ্রাচ্যের চরম উত্তেজনা। মাত্র কিছুদিন আগেই ইসরায়েল সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালায়। তার জবাবে, ইরানও ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই পাল্টাপাল্টি হামলা এখন শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং পুরো অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অনিশ্চয়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি, বাণিজ্য, এমনকি অভিবাসনেও বড় প্রভাব পড়বে। আর এ কারণে অনেক পশ্চিমা দেশ এখন তাদের নাগরিকদের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল ত্যাগের পরামর্শ দিচ্ছে।
তেহরানে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস বন্ধ হওয়া শুধু একটি দেশের সিদ্ধান্ত নয়—এটা এক গভীর সংকেত। এ থেকে বোঝা যায়, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কতটা বিস্তৃত ও মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ যদি সরাসরি কূটনৈতিক কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।