চৌরাপাড়ায় ঘরবাড়ি ভেঙে রেললাইন নয়, মহাসড়কের পাশ দিয়ে কর্ডলাইন চায় বন্দরবাসী..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Residents of densely populated Chowrapara in Narayanganj strongly oppose the proposed rail corridor through their homes, demanding it be rerouted alongside the Dhaka-Chattogram highway.

নারায়ণগঞ্জ: রেলপথ উন্নয়নের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত একটি কর্ডলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রকল্পের সম্ভাব্য চারটি রুট নির্ধারণ করে ইতোমধ্যে চলছে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও প্রাথমিক জরিপ কার্যক্রম। তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ ও বিরোধ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা প্রকল্পের বর্তমান পরিকল্পনার বিরোধিতা করে কর্ডলাইনটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ দিয়ে নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চৌরাপাড়া একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেখানে বহু পরিবার বসবাস করে এবং এখানে রয়েছে শত শত পাকা ও আধা-পাকা ভবন, শিল্পকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। প্রস্তাবিত রেললাইন এই এলাকা দিয়ে নির্মিত হলে হাজারো মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হবে এবং বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে স্থানীয়রা। ইতোমধ্যেই রেল কর্তৃপক্ষের সার্ভে টিম যখন এলাকায় এসে কাজ শুরু করেছে, তখন কয়েক দফা তর্ক-বিতর্ক ও বচসার ঘটনা ঘটেছে স্থানীয়দের সঙ্গে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার বিকেলে চৌরাপাড়া এলাকায় "আর্থ-সামাজিক প্রভাব নিরূপণ ও সুরক্ষা মূল্যায়ন" বিষয়ক একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে প্রকল্প পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এনরেক কনসালটেন্ট লিমিটেড। সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা আক্তার ইতি, এনরেক কর্মকর্তা রিনা খানম, রেল কর্মকর্তা লুৎফর রহমান, ডিজাইন ও সার্ভে ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, বন্দর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল আলম জাহিদ, অর্থ সম্পাদক লতিফ রানা, স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ জামান, ভূমি অধিগ্রহণ পরামর্শক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তালুকদার, জরিপ কর্মকর্তা মীর ফারুক হোসেন, মহিবুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কোনোভাবেই যেন চৌরাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতির শিকার না হন। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান, যেন কর্ডলাইনটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে স্থানান্তর করা হয়। এতে করে সরকারি খরচও কমে আসবে এবং ঘনবসতিপূর্ণ জনপদে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও থাকবে না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা জানান, এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটি একটি সম্ভাব্য রুটমাত্র। সার্ভের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন পথে কর্ডলাইনটি নির্মাণ করা হবে। চৌরাপাড়ার পাশাপাশি অন্য বিকল্প রুটেও জরিপ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে তারা আশ্বস্ত করেন, জনগণের মতামত, আর্থ-সামাজিক প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেই প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হবে।

এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন হোক, তবে তা যেন মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস করে না। তারা মনে করেন, বিকল্প রুট ব্যবহার করে রেলপথ নির্মাণ করলে সরকার যেমন ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারবে, তেমনি নাগরিক অধিকারও রক্ষা পাবে।

রেলপথ উন্নয়নের এই প্রকল্প নিয়ে এখন চলছে জনমত গঠনের সময়। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিভাবে জনগণের দাবি ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Nenhum comentário encontrado