গাজা উপত্যকায় বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে ভয়াবহ এক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এই হামলার লক্ষ্য ছিল গাজা শহরের শুজাইয়া পাড়ার একটি আবাসিক এলাকা।
বিশ্ববিখ্যাত সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৫৫ জন। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮০ জনের বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, যাদের জীবিত পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এই হামলা এমন এক সময় ঘটলো, যখন ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পূর্বে ঘোষণা দেওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর থাকার কথা ছিল। গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল দুই পক্ষ। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
ইসরাইল যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে পুনরায় বিমান হামলা শুরু করে গাজা অঞ্চলে। এতে গত কয়েক সপ্তাহেই ১৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে ঘোষণা করেন যে, “আমরা গাজায় হামলা আরও জোরালো করবো। এই অভিযান এখন শেষ হওয়ার নয়।” এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তবে ইসরাইল সরকার বরাবরের মতোই যুদ্ধের নামে নিজেদের কর্মকাণ্ডকে ‘আত্মরক্ষার পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ৫০,৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের একটি বিশাল অংশ নারী ও শিশু। এছাড়া লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর নিচে এখনো নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পুরো এলাকা যেন এক টুকরো “মৃত্যুপুরী”। কান্নার শব্দে ভারী হয়ে উঠেছে গাজার বাতাস।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কোথায়?
এই নির্মমতার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো কেবল ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। অথচ প্রতিদিন গাজায় বাড়ছে মৃত্যু, নিঃশেষ হচ্ছে একটি জাতির ভবিষ্যৎ।
গাজায় এই চলমান হামলা আর মৃত্যু এখন কোনো খবর নয়, এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে এক নিষ্ঠুর নিয়মিত চিত্র। এই বাস্তবতা কতদিন চলবে? নারী-শিশুদের এই অব্যাহত রক্তপাত থামাতে আন্তর্জাতিক মহল কবে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে?
গাজার আকাশে আবারও ধোঁয়া—পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্পাপ মানুষেরা সেখানে প্রতিদিন মৃত্যুর প্রতীক্ষায়।