শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলে শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটা। একইসাথে চলছে মাড়াই। চলনবিলের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে সবুজ ও সোনালী শীষে সমারোহ। হিমেল বাতাস ও মিষ্টি রোদে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। প্রতিটি মাঠে মাঠে এখন কৃষকের সবুজ স্বপ্নে ছেয়ে গেছে। সেই সাথে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও বাজারে ধানের দাম ভালো হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ধানের দৃশ্য যেন সেই আবহমান বাংলার চিরায়িত রূপের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। দৃষ্টিসীমা ছাপিয়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধানের সোনালি শীষ। সেই দোলায় লুকিয়ে রয়েছে চলনবিল অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন। চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলাতে কৃষকরা প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যেই শুরু করেছেন আগাম জাতের বোরো ধান কাটা। প্রচণ্ড খরতাপ আর ঝড় ও শিলা বৃষ্টির আশঙ্কার কারনে কিছুটা আগাম শুরু করেছেন ধান কাটা। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে, সেই সাথে ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক।
প্রায় পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব। সেই উৎসবকে ঘিরে চলছে ধান কাটার শ্রমিক সংগ্রহ, খোলা পরিষ্কার ও মাড়াই যন্ত্র মেরামতসহ জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তোলার নানা প্রস্তুতি। বসে নেই কৃষক পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও।
বর্ষা মৌসুমে চলনবিলের জমিতে প্রচুর পরিমাণে পলি জমায় জমি খুবই উর্বর হয় আর সে কারণে চলনবিলের জমি গুলোতে ফলন বেশি হয়।
বিলশা এলাকার কৃষক জসিমউদ্দিন জানান, এ বছর বিলের পানি আগে নেমে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ তার জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছে, ফলনও ভালো হয়েছে, সেই সাথে দামও বেশি। তিনি প্রায় ৯০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর সময়মত ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই তার জমির সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
বাগাতিপাড়া থেকে চলনবিলে ধান কাটতে আসা শ্রমিক মিজানুর রহমান জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ধান যেমন বেশি, তেমনি দামও বেশি হওয়ায় পরেও আমাদের মজুরী বাড়ে নাই।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চলনবিলে দেড় লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। আশেপাশের জেলা থেকে প্রচুর পরিমাণ ধান কাটা শ্রমিক আসছেন, তাছাড়াও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়েও কৃষক তার জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে আশা করছি আর কিছুদিনের মধ্যে বাঁকি ধান কাটা শেষ হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব সময় সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানে তেমন কোনো পোকা মাকড়ের প্রভাব পড়েনি, তাই ফলনও বেশি হয়েছে এবং এ বছর দাম ভালো হওয়ায় কৃষক লাভের মুখ দেখবে বলে তারা আশা করছেন।