বাংলাদেশের জন্য সুখবর! চীন বাংলাদেশকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করবে। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং এ ঘোষণা দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার
২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠলেও, চীন আরও দুই বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা বজায় রাখবে, তবে কানাডা ও অন্যান্য দেশ এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বাংলাদেশের রপ্তানির বর্তমান অবস্থা
চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়েনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীনে ৬৭৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সুবিধা কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা ও রপ্তানি পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে।
চীনা বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ সরকার চীনা কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীনের বিনিয়োগ ছিল ১.১৫ বিলিয়ন ডলার, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা কমছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপের কারণে চীনা কোম্পানিগুলো নতুন বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছে, যা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. এম এ রাজ্জাক বলেছেন, "চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখতে হলে, বাংলাদেশকে এখনই কৌশলগত চুক্তি করতে হবে। চীন এখনও উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায়, বাংলাদেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে দীর্ঘমেয়াদে এ সুবিধা ধরে রাখতে পারে।"
বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা
১. নতুন রপ্তানি পণ্য: গ্রীষ্মকাল থেকেই বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে, এছাড়া কাঁঠাল, পেয়ারা ও জলজ পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা চলছে। ২. বৃত্তি সুবিধা: চীন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি স্কলারশিপ দেবে, বর্তমানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছে। ৩. নৌপরিবহন: বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চীন চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ অর্থায়ন করবে। ৪. রোহিঙ্গা সংকট: চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতা করে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হবে, এটি দুই দেশের জন্যই লাভজনক।"
উপসংহার
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকে দ্রুত কৌশলগত আলোচনায় যেতে হবে। একইসঙ্গে চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে।