বরিশালে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন আল সুহানকে ছাড়াতে আন্দোলনকারীরা টানা ছয় ঘণ্টা কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে রাখেন। পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত সংলাপের পর অবশেষে মধ্যরাতে তারা সরে যান।
বরিশালে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় একটি গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে। স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা হোসাইন আল সুহানকে গ্রেফতারের পর আন্দোলনকারীরা টানা প্রায় ছয় ঘণ্টা কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে রাখেন।
সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত পৌনে বারোটা পর্যন্ত থানা কম্পাউন্ডের মূল প্রবেশদ্বার আটকে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের প্রধান সংগঠক মহিউদ্দিন রনিসহ শতাধিক কর্মী এ সময় স্লোগান দিতে থাকেন এবং হোসাইন আল সুহানের মুক্তি দাবি করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে থানা এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
রাতের শুরুতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন রনিসহ আন্দোলনকারীরা সরাসরি থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে গিয়ে জোরালোভাবে সুহানের মুক্তি দাবি করেন। এ সময় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত উপকমিশনার বেলাল হোসাইন এবং কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার অলক কান্তি শর্মা থানার অভ্যর্থনা কক্ষে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কথোপকথনের এক পর্যায়ে অতিরিক্ত উপকমিশনার বেলাল হোসাইনের সঙ্গে মহিউদ্দিন রনির তর্কাতর্কি শুরু হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। তবে উপকমিশনার ইমদাদ হুসাইন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এরপর আন্দোলনকারীরা থানা প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। এ সময় থানা ঘিরে সাধারণ মানুষও ভিড় জমায় এবং পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানায়, শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফদের ওপর হামলা এবং জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে হোসাইন আল সুহানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এসব মামলার ভিত্তিতেই মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবনের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়েছে।
তবে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, গ্রেফতারটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের অভিযোগ, সুহানকে টার্গেট করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এতে আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপকমিশনার ইমদাদ হুসাইন বলেন, “থানা হচ্ছে নাগরিকদের সেবা গ্রহণের জায়গা। শিক্ষার্থীরা এসেছিল, আমরা তাদের দাবি শুনেছি এবং আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব সেটি জানিয়েছি। তবে সুহানকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তাকে আরও প্রশ্ন করা হয়, মামলার প্রধান আসামি মহিউদ্দিন রনি থানায় উপস্থিত থাকলেও কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি? উত্তরে তিনি বলেন, “অভিযোগ দেওয়া সবার অধিকার। তবে অভিযোগ প্রমাণিত করার জন্য তদন্ত প্রয়োজন। যদি তদন্তে রনির সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অবশেষে রাত প্রায় বারোটার দিকে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীরা থানা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। তবে তারা ঘোষণা দেন যে, যদি দ্রুত হোসাইন আল সুহানকে মুক্তি না দেওয়া হয় তাহলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এই ঘটনায় বরিশাল শহরে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরণের থানা ঘেরাও পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগজনক। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, সরকার তাদের কণ্ঠ রোধ করতে গ্রেফতারের পথ বেছে নিয়েছে।
বরিশালের সাধারণ মানুষ পুরো ঘটনার দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ‘ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার’ ও ‘থানা ঘেরাও’—এই দুটি বিষয় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে সুহানকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। মামলার অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ আইনি পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে তার মুক্তি বা কারাবাসের প্রশ্ন।