close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ছাত্রদল নেতা রনির বিরুদ্ধে অ'প'হ'রণ ও মু'ক্তি'পণ আদায়ের অভিযোগ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঝিনাইদহে আলোচিত এক ঘটনায় ছাত্রদল নেতা তানভির রনি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ, নির্যাতন ও ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, ভয়ংকর ওই রাতের পর এখনও আতঙ্..

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় চাঞ্চল্যকর এক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগের তীর সরাসরি ছাত্রদল নেতা তানভির রনি এবং তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে বিকাশে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ১১ জুন (মঙ্গলবার) রাতে, যখন ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ডুমাইন গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে বারোবাজারের বাদেডিহী এলাকায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী শাহ আসাদুজ্জামান নিজ বাসার সামনে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ করেই দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত দুই যুবক—সবুজ ও আব্দুল করিম—মোটরসাইকেলে এসে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।

শাহ আসাদুজ্জামানকে নিয়ে যাওয়া হয় ঠিকডাঙ্গা দাসপাড়া মাঠে, যেখানে অপেক্ষায় ছিল একটি সংঘবদ্ধ দল। এই দলে ছিল শরিফুল (পিরোজপুর), তানভির রনি (মিঠাপুকুর), রিয়াজ (বাদুরগাছা), স্বপন (ঠিকডাঙ্গা), ইয়াসিন, হামিদ ড্রাইভারসহ আরও কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি। অপহরণের পর শুরু হয় নির্যাতন এবং দাবি করা হয় ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ।

পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানার পর আতঙ্কিত হয়ে রাতেই ছয়টি বিকাশ নম্বরে মোট ২ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর পর অপহরণকারীরা রঘুনাথপুর বাজারের 'বিকে স্টোর' এজেন্ট পয়েন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করে নেয়। পরে নির্যাতিত ব্যবসায়ীকে একটি ফাঁকা মাঠে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়।

শুধু অর্থ আদায়েই থেমে থাকেনি অপহরণকারীরা। যাওয়ার আগে শাহ আসাদুজ্জামানকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে যায় — যদি তিনি কাউকে কিছু বলেন, তবে তাকে হত্যা করা হবে।

ঘটনার দুই দিন পর, ১৩ জুন (শুক্রবার) শাহ আসাদুজ্জামানের স্ত্রীর ভাই মো. সৌরভ বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

অভিযোগে উল্লেখ করা ছয়টি বিকাশ নম্বর এখন পুলিশের তদন্তের আওতায় রয়েছে। ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, নম্বরগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে কার নামে নিবন্ধিত এবং কোথা থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা তানভির রনি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ভুক্তভোগী ব্যক্তি একজন সন্ত্রাসী এবং হত্যা মামলার আসামি। তাকে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, ঘটনার রাতে তিনি যশোরে ছিলেন এবং এই অপহরণ বা অর্থ আদায়ে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তানভির রনির রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মানিক বলেন, “রনি আমাদের সহ-সভাপতি। অভিযোগের বিষয়টি জানা নেই। তবে যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকারিয়া মাসুদ বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। অভিযোগ হাতে পেয়েছি এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী শাহ আসাদুজ্জামানের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—রাজনীতির ছত্রছায়ায় অপরাধীরা কি পার পেয়ে যাচ্ছে?

לא נמצאו הערות


News Card Generator