ছাত্রদের সঙ্গে মতবিরোধ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির কৌশলী অবস্থান


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে মতপার্থক্যের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে তারা তাদের প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে মতামত বিনিময় শুরু করেছে। বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে এবং সেই অনুযায়ী সরকারকে একটি নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হবে।
বৈঠক ও মতবিনিময় প্রক্রিয়া
৩১ জানুয়ারি বিএনপি ১২ দলীয় জোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পর্যায়ক্রমে তারা অন্যান্য শরিক দলগুলোর মতামতও নেবে। পাশাপাশি, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তাদের তৈরিকৃত ঘোষণাপত্রের খসড়ায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসবে না। তবে, শরিকদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু টুকটাক সংশোধন এবং পরিবর্ধন হতে পারে।
ঘোষণাপত্রের মূল প্রতিপাদ্য
বিএনপি তাদের ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার সরকারের পতন পর্যন্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিক বিবরণ তুলে ধরেছে। ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট করা হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার আর না আসতে পারে, সেই বিষয়ে দলটি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি তাদের ঘোষণাপত্রে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের গুম-খুন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চেয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। একই সঙ্গে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
‘প্রোক্লেমেশন’ নয়, ‘ডিক্লারেশন’ শব্দ ব্যবহার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বিএনপি ‘প্রোক্লেমেশন’ না বলে ‘ডিক্লারেশন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই ঘোষণাপত্রের খসড়া পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিএনপির মতে, এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং নির্দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
ছাত্রদের সঙ্গে মতবিরোধ
বিএনপির ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা গত ৩১ ডিসেম্বর ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপির আপত্তির কারণে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
ছাত্রদের ঘোষণাপত্রে স্বাধীনতা যুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধ’ বলা হয়েছে, যেখানে বিএনপি ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। বিএনপি তাদের ঘোষণাপত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, যা ছাত্রদের ঘোষণাপত্রে নেই। এসব বিষয় নিয়ে ছাত্র সংগঠন এবং বিএনপির মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও দলটি সম্মানজনকভাবে একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছে।
বিএনপির কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিএনপি ছাত্রদের দেওয়া ঘোষণাপত্রকে উপেক্ষা না করে বরং বাস্তবতার নিরিখে খসড়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর বিএনপি তাদের নিজস্ব খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এটি মূলত বিএনপির দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও ছাত্রদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে, তবে বিএনপি একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সবার মতামতকে সমন্বিত করে চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা।
コメントがありません