close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ছাত্রদলে ছাত্রলীগের ‘নতুন ঠিকানা’, দেড় শতাধিক নেতা পুনর্বাসিত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ছাত্রদলের বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে শতাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা! ঢাবি, জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিক্ষোভ ও আদর্শগত প্রশ্ন।..

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কমিটি গঠনের ধারায় দেখা দিয়েছে নতুন বিতর্ক ও আস্থার সংকট। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতে একের পর এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে জায়গা করে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ছাত্রদল আদর্শ বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক ভারসাম্যের খেলায় নেমেছে, যার ফল হতে পারে ভয়াবহ সাংগঠনিক বিপর্যয়।

২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অন্তর্ভুক্তির ঘটনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। সবচেয়ে আলোচিত হয়ে ওঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ৪৫৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অনুসন্ধান অনুযায়ী, এই কমিটিতে অন্তত ৫০ জন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। এমনকি দুজন সদস্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নন—তারা বহিরাগত।

এ খবর প্রকাশের পর থেকেই জবি ছাত্রদলে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। একের পর এক বিক্ষোভ, সংবাদ সম্মেলন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে কি আদৌ ছাত্রলীগের পুনর্বাসন হচ্ছে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ২৪২ সদস্যের কমিটিতেও সাবেক ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা অন্তর্ভুক্ত হন। তাদের বিরুদ্ধে অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও প্রবল প্রতিবাদের মুখে অন্তত ৬ জনকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হয়, কিন্তু অভিযোগ রয়েছে—তারা এখনও অঘোষিতভাবে সংগঠনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত।

এই ঘটনা ছাত্রদলের আদর্শিক ভিত্তি নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। একাধিক নেতা বলেন, “যারা একসময় ছাত্রলীগের পতাকা হাতে ঘুরতেন, তারাই এখন ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতেও অন্তত ১৩ জন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। পরে ছয়জনকে বহিষ্কার করা হলেও বাকিদের নিয়ে রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। একই অবস্থা গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে ৫৪ সদস্যের কমিটিতে প্রায় ১৫ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েই রয়েছে বিতর্ক।

একজন সিনিয়র ছাত্রদল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ছাত্রদলের গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয়ে যাবে। মানুষ আমাদেরকে ছাত্রলীগের ছায়া সংগঠন ভাবতে শুরু করবে।

ছাত্রদলের ভেতরে এখন আদর্শ বনাম বাস্তবতার টানাপোড়েন তীব্র হচ্ছে। অনেকের মতে, মাঠের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে আদর্শ বিসর্জন দিচ্ছে সংগঠনটি। এর ফলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই তৈরি হচ্ছে বড় প্রশ্ন।

শুধু ছাত্রদল নয়, নতুন অনেক দলেও দেখা যাচ্ছে ছাত্রলীগের সাবেকদের স্থান। এতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদল অবশ্য বলছে—এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, কেবলমাত্র কাগজে কলমে অব্যাহতি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না, মাঠে তাদের কার্যকরভাবে বিচ্ছিন্ন করতেই হবে।

যারা আদর্শ বিশ্বাস করে ছাত্রদলে এসেছে, তারা ছাত্রলীগের হাত থেকে সংগঠন বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। কিন্তু কেন্দ্র যদি বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভাঙনের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

সাবেক প্রতিপক্ষদের পুনর্বাসনের এই প্রবণতা ছাত্রদলের সাংগঠনিক কাঠামো ও আদর্শিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলছে। তৃণমূলের ক্ষোভ, মাঠের প্রতিবাদ, আর সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। এখন দেখার বিষয়—ছাত্রদল কী আদর্শে ফিরে আসবে, নাকি রাজনীতির বাস্তবতা মেনেই সংগঠনটি নতুন পথে হাঁটবে?

No se encontraron comentarios