ইসলামে চাঁদাবাজি শুধু হারামই নয়, এটি এমন এক জঘন্য অপরাধ যার জন্য রয়েছে চার ধরনের কঠোর শাস্তি। কুরআন ও হাদিসে এসব শাস্তির স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে।
চাঁদাবাজি—এটি কোনো সাধারণ অপরাধ নয়, বরং ইসলামের দৃষ্টিতে এটি এক ধরনের দস্যুতা ও সরাসরি আল্লাহর জমিনে ফিতনা সৃষ্টি। আজকের সমাজে অর্থলোভী ও ক্ষমতাবানরা যেভাবে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছে, তা যে শুধু আইনগত অপরাধ নয় বরং ভয়াবহ পরিণতির দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে, তা ইসলাম বহু পূর্বেই ঘোষণা করেছে।
চাঁদাবাজি শুধু যে চাঁদা আদায়কারী করে, তা নয়। যে লেখে, যে নেয়, যে পরিকল্পনা করে — সবাই একইভাবে গুনাহগার। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, কেউ কারো সম্পদ জোরপূর্বক গ্রহণ করলে তা হারাম, এবং তা হলো আল্লাহর কঠোর নিষেধের লঙ্ঘন।
তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরো না এবং সে উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে এমন কোনো মামলা কোরো না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনেশুনে গ্রাস করবে।
— সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৮
যারা মানুষের সম্পদ জোর করে ছিনিয়ে নেয়, চাঁদা আদায় করে বা অপরাধের মাধ্যমে দুনিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন ভয়ংকর ৪ ধরনের শাস্তির বিধান:
১. হত্যা করা হবে
২. শুলে চড়ানো/ফাঁসি দেওয়া হবে
৩. এক হাত ও বিপরীত পা কেটে ফেলা হবে
৪. অন্য এলাকায় নির্বাসনে পাঠানো হবে, যেখানে তারা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত বন্দি থাকবে।
যারা আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে—হত্যা, ফাঁসি, হাত-পা কেটে ফেলা কিংবা নির্বাসন।
— সুরা মায়িদাহ, আয়াত ৩৩
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে, সে যেন এখনই ক্ষমা চায়, কারণ আখিরাতে কোনো টাকা থাকবে না; তখন তার পুণ্য কেটে নেওয়া হবে। পুণ্য না থাকলে, মজলুমের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
— সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৮৮৫
চাঁদা গ্রহণকারী, এর সুবিধাভোগী এবং সংশ্লিষ্ট সবাই ইসলামি দৃষ্টিতে জালিম। আর জালিমদের জন্য কঠিন পরিণতির কথা বলা হয়েছে কোরআনে:
শুধু তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ আচরণ করে।”
— সুরা শুরা, আয়াত ৪২
বর্তমান সমাজে চাঁদাবাজি যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তার ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত—প্রতিদিন কেউ না কেউ এই অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। অথচ ইসলাম চায় একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ।
চাঁদাবাজদের প্রতিহত করতে হলে শুধু আইন নয়, ইসলামি চেতনা জাগ্রত করতে হবে। পরিবার, সমাজ, এবং প্রশাসনকে একত্রে চাঁদাবাজি বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে।
চাঁদাবাজি কোনোভাবেই ইসলাম সম্মত নয়। এটা একাধারে মানবাধিকার লঙ্ঘন, অন্যদিকে আখিরাতে ভয়ংকর শাস্তির কারণ। যারা এই অন্যায়ে লিপ্ত, তাদের উচিত এখনই তাওবা করা এবং অন্যায়ভাবে নেওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া। নতুবা তারা পরকালে এমন শাস্তির সম্মুখীন হবে, যেখান থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিনই নয়, অসম্ভব।