close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

চাঁদা না পেয়ে মুদি দোকানীকে পিটিয়ে জখম করেছে বিএনপি নেতা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
A grocery shopkeeper in Narayanganj was brutally beaten with iron rods by local BNP leaders after refusing extortion money and free cigarettes. Police confirmed the incident and legal action is underw..

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে চাঁদা ও বাকিতে সিগারেট না দেয়ায় মুদি দোকানদারকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা রনি-জনি ও তাদের সহযোগীরা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ কবরস্থান রোড এলাকায় এক ভয়াবহ চাঁদাবাজির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চাঁদা না পেয়ে এবং বাকিতে সিগারেট দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মুদি দোকানদার সেলিম মিয়াকে (৪৫) লোহার রড দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা রনি ও জনি।

আহত দোকানদারের ছেলে সোহান বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে মৃত সামাদ মিয়ার ছেলে নূরু ও জনি বিএনপি’র পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছিল। প্রায় সময়ই তারা দোকানিদের কাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা করে আদায় করত। ভয়ে পড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা টাকা দিতেও বাধ্য হতেন। তবে নিয়মিত চাঁদা দিতে গিয়ে দোকানদার সেলিম মিয়া ব্যবসা পরিচালনায় মারাত্মক সমস্যায় পড়েন এবং মানসিকভাবে চরম চাপে ছিলেন।

ঘটনার দিন সকালে নূরু সেলিম মিয়ার দোকানে এসে ৫০০ টাকা ও বাকিতে সিগারেট দাবি করে। ব্যবসা মন্দা থাকায় দোকানদার টাকা ও সিগারেট দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূরু প্রথমে তাকে verbally হুমকি দেয় এবং পরে শারীরিকভাবে হামলা চালায়। কিছুক্ষণ পর নূরু তার ভাই জনিকে ডেকে আনে। দুই ভাই মিলে লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সেলিম মিয়ার মাথায় আঘাত করলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা আহত দোকানদারকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানান, তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে। বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই এবং প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বন্দরে কোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেয়া হবে না।”

এ ঘটনার পর থেকে নবীগঞ্জ এলাকায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহল রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। দোকানদার সেলিম মিয়া চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় আজ প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন।

অন্যদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে এই চাঁদাবাজির সংস্কৃতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ছোট ছোট দোকানিদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করা হয়, না দিলে মারধর কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো ঘটনা ঘটে। তারা দ্রুত এই ধরনের অপরাধ বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা চান।

এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে চাঁদাবাজরা দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। অথচ ভয়ভীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেকে মুখ খোলার সাহস পান না।

মুদি দোকানদার সেলিম মিয়ার ওপর হামলার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা কি আর নিরাপদ? সাধারণ মানুষ যদি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সবসময় জিম্মি হয়ে থাকে, তবে তারা ন্যায়বিচার পাবে কীভাবে?

বর্তমানে পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। আহত দোকানদারের পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

Nema komentara