close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি: ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনে হামলার নেপথ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘মিটিং’!
ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলার পরিকল্পনা করার বিষয়ে বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে। এক ছাত্রলীগ কর্মী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, যেখানে তিনি জানান, ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একটি মিটিংয়ে নেওয়া হয়েছিল।
গ্রেপ্তার ও আদালতে স্বীকারোক্তি
ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী তারেক হোসেন (১৯) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে জবানবন্দি দেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত মুস্তারির আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দেন।
তারেক হোসেন ফেনী সদর উপজেলার রাজাঝি দীঘিরপাড় এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হকের অনুসারী। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একটি বৈঠকে।
নেতাদের ‘মিটিং’ এবং হামলার পরিকল্পনা
তারেক হোসেন আদালতকে জানান, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল এবং পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি একটি গোপন বৈঠকে ছাত্র আন্দোলনে হামলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন-চারশ’ নেতা-কর্মী অস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেন।
তারেক আরও জানান, তাঁর দলে থাকা ৯ জন গুলি চালিয়েছিলেন, যার মধ্যে অর্ণব ও রাকিবের নাম উল্লেখযোগ্য। আদালত তাঁর স্বীকারোক্তি গ্রহণ করে এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মম সিংহ ত্রিপুরা জানান, আসামি নিজেই হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং আদালতে তাঁর দেওয়া জবানবন্দিতে পুরো পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। কারা গুলি চালিয়েছেন, কারা অস্ত্রধারী ছিলেন এবং কার নির্দেশে এসব করা হয়েছে—সব তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ এখন বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
নিহত ও আহতদের বর্ণনা
গত বছরের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায়। এতে কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট মারা যান।
নিহত মাহবুবুল হাসান সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের নোমান হাসানের ছেলে ছিলেন এবং ছাগলনাইয়ার আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারসহ স্থানীয় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে আসে।
হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মাহবুবুলের ভাই মো. মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফেনী মডেল থানায় ৮টি হত্যা মামলা ও ১৩টি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ এই মামলাগুলোর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
উপসংহার
এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একজন ছাত্রলীগ কর্মীর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ছাত্র আন্দোলনে হামলার পেছনে ছিল পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। পুলিশ ও প্রশাসনের উপর যথাযথ চাপ সৃষ্টি করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।
کوئی تبصرہ نہیں ملا



















