close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

চাকরির নামে ই'উ'ক্রে'ন যু'দ্ধে পাঠানো চ'ক্রে'র মূল হোতা আলমগীর গ্রে'প্তা'র..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিদেশে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হোতা আলমগীর হোছাইন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার। সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়ংকর এক মানবপাচার চক্রের অমানব..

চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের তরুণদের পাঠানো এক ভয়ঙ্কর চক্রের মূল হোতা মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন অবশেষে পুলিশের জালে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরদিন শুক্রবার (১৩ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, চক্রটি উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশি যুবকদের প্রথমে সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসায় পাঠায়। এরপর তাদের রাশিয়ায় পাচার করে একটি গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সামরিক ক্যাম্পে তুলে দেওয়া হতো। ভুক্তভোগীদের বলা হতো, রাশিয়ায় ‘চকোলেট ফ্যাক্টরিতে’ কাজ, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির পজিশনে চাকরি দেওয়া হবে, যেখানে মাসে বেতন ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা।

কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সৌদি আরবে নেওয়ার পর তাদের রাখা হতো অজ্ঞাত স্থানে, ওমরাহ হজ শেষ হওয়ার পর রাশিয়ায় এক ব্যক্তি ‘সুলতানের’ কাছে হস্তান্তর করা হতো। এরপর শুরু হতো দুঃস্বপ্ন—সামরিক প্রশিক্ষণ এবং যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার ভয়াবহ প্রক্রিয়া। অনিচ্ছুকদের দেওয়া হতো শারীরিক নির্যাতন, খাদ্য বন্ধ করে দেওয়া, মানসিক নির্যাতনের মতো ভয়ংকর শাস্তি। শেষ পর্যন্ত তারা বাধ্য হতো রণক্ষেত্রে নামতে।

এই ফাঁদে পা দিয়ে জীবন হারিয়েছেন নাটোরের সিংড়া থানার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামের আরেকজন যুবক। আরেকজন ভুক্তভোগী, নরসিংদীর পলাশ থানার মো. আকরাম হোসেন, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে নিজ উদ্যোগে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ফিরে এসে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তথ্য প্রকাশ করেন।

এই তথ্যের ভিত্তিতে আমিনুলের স্ত্রী ঝুমু আক্তার বনানী থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—চক্রটির আরেকটি দল এখনও সৌদি আরবে আটকা পড়ে আছে। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে, তারা রাশিয়া যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় এখন কোন কাজ করতে পারছে না, না পারছে দেশে ফিরতে।

সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, চক্রটি অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে সংযুক্ত। এদের সঙ্গে রয়েছে ভ্রমণ এজেন্সি, মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক দালাল এবং রাশিয়ার কিছু ব্যক্তি। তদন্তে উঠে আসে ফাবিহা জেরিন তামান্না নামের এক নারী, যিনি ‘ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড’-এর অংশীদার। তাকেও গত ৫ ফেব্রুয়ারি সিআইডি গ্রেপ্তার করে যখন তিনি নেপালে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।

এই চক্রের বিরুদ্ধে সিআইডি এখন কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। দেশ-বিদেশে সমন্বয় করে ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং এই মানবপাচার চক্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে তারা।

এ বিষয়ে সিআইডির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, “মানবপাচার ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির নামে তরুণদের জীবন নিয়ে খেলা কোনওভাবেই বরদাশত করা হবে না। এই চক্রকে নির্মূল করতে যতদূর যাওয়া লাগে, আমরা যাবো।”

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator