এক সময় ঈদ মানেই ছিল বর্ণিল স্বপ্নের বাস্তবতা। নতুন জামা-পায়জামা, আতর-টুপি, ফিরনি, সেমাইয়ের সুগন্ধে ভরা সকালের অপেক্ষা, পকেটে জমে ওঠা ঈদ সালামি, কোরবানীর পশুর জবেহ—সব মিলিয়ে ঈদ ছিল প্রাণের উৎসব। ছোটবেলার ঈদে কোনো দায় ছিল না, ছিল কেবল প্রাপ্তির অনুভব। কিন্তু বয়স যতই বাড়ছে, সেই ঈদের রঙ যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
শৈশবের ঈদ ও প্রাপ্তবয়স্কের ঈদে রয়েছে অনেক তফাৎ, ছোটবেলায় ঈদ মানেই ছিল দৌড়ঝাঁপ, আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, হইহুল্লোড়। এখন ঈদ মানে শুধু ছুটি, ক্লান্তি আর দায়িত্বের ভার। জামা কেনা এখন আর আগের মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নয়। ঈদের আগের রাত—যেটা একসময় ছিল ‘চাঁদ রাত’ নামের এক অনন্য রঙিন অধ্যায়—এখন তা আর মনে ধরা পড়ে না।
যারা নেই, তাদের শূন্যতাই যেন ঈদের বিষণ্নতা। ঈদের আনন্দ অনেকটাই নির্ভর করে প্রিয়জনদের উপস্থিতির উপর। অনেকেই এখন আর নেই—কেউ নেই জীবনে, কেউ নেই পৃথিবীতেই। সেই মুখগুলো, যাদের সঙ্গে ঈদের প্রতিটি মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়া হতো, আজ তারা নিখোঁজ। সামাজিকতা এখন মোবাইল ফোনের ছোট্ট পর্দায় আটকে আছে, আর আত্মীয়তার উষ্ণতা ঠুনকো ‘ঈদ মোবারক’ মেসেজে সীমাবদ্ধ।
ঈদের অর্থ এখন বদলে গেছে, একসময় ঈদের মানে ছিল ‘আমি কী পেলাম’; এখন ঈদের মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘অন্যরা কতটা ভালো থাকল’। নিজে নতুন জামা না কিনলেও মেয়ের মুখে হাসি থাকলে তাতেই শান্তি। ঈদ এখন আর কেবল নিজের জন্য নয়, বরং পরিবারের জন্য, ছোটদের জন্য, সমাজের জন্য।
আনন্দ আছে, তবে রূপ পাল্টেছে। আজকের ঈদে হয়তো আগের মতো চঞ্চল উচ্ছ্বাস নেই, কিন্তু আছে একধরনের শান্ত প্রাপ্তির অনুভব। সেই অনুভবের মধ্যে রয়েছে দায়িত্ব, ভালোবাসা, আর স্মৃতির কোমল ছায়া। ঈদ এখন একটা উপলক্ষ—নিজেকে আরেকটু পরিণত দেখার, আরেকটু পরিশীলিত ভালোবাসা বিলানোর।
ঈদ এখন আর শুধু রঙিন জামা, ঈদ সালামী কিংবা ফিরনি-সেমাইয়ের গন্ধ নয়। ঈদ এখন একটুকরো নীরবতা, স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধানো কিছু মুখ, আর প্রিয়জনের অভাব টের পাওয়ার ক্ষণিক উপলব্ধি। তবুও মন চায়—একবার, অন্তত একবার, ছেলেবেলার সেই ঈদের সকাল যেন ফিরে আসে। মা-বাবা যেন আবার বলে ওঠেন—“উঠ, আজ ঈদ, ঈদ মোবারক”



















