বৃহস্পতিবার ‘চিকেনস নেকের কাছে’ জনসভা করবেন মোদী

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতীয় রাজনীতিতে ফের তীব্র উত্তাপ ছড়াতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা আলিপুরদুয়ারে একট..

বিশেষ করে আলিপুরদুয়ারের ভূগোলগত অবস্থান, তথা ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডোরের নিকটবর্তী অবস্থান এই সফরকে করে তুলেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল কৌশলগতভাবে এতটাই স্পর্শকাতর যে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতিতেও তার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আর ঠিক এই কারণেই মোদীর এই সফর নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, “এটা শুধু জনসভা নয়—এটা একরকম কৌশলগত বার্তা।”


মোদীর ভ্রমণসূচি: সিকিম থেকে আলিপুরদুয়ার, তারপর বিহার

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি থেকে আকাশপথে প্রথমে নামবেন বাগডোগরা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে রওনা হবেন সিকিমের গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে। সিকিম সফর সেরে হেলিকপ্টারে চড়ে পৌঁছাবেন আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডে, যেখানে আয়োজিত হবে তাঁর বহুল প্রতীক্ষিত জনসভা। জনসভা শেষে তিনি পাটনার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন, যেখানে তাঁকে বিহারের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে হবে।


 আলিপুরদুয়ারে জনসভা ঘিরে উত্তেজনা ও প্রস্তুতি তুঙ্গে

মোদীর আগমন ঘিরে এখন আলিপুরদুয়ার কার্যত এক রাজনৈতিক মহাযজ্ঞের রূপ নিয়েছে। পুরো শহরজুড়ে মোদীর কাটআউট, বিশাল ব্যানার, বিজেপির পতাকায় ছেয়ে গেছে রাস্তাঘাট। আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভাকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

বিজেপি কর্মীরা দারুণ উচ্ছ্বসিত। স্থানীয় বিজেপি নেতা পঙ্কজ মিত্র জানান, “উত্তরবঙ্গবাসীর জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা নিয়ে আসবেন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদীর এই সফরের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের মানুষের মন জয়ের পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক শক্তিকেও নতুন করে চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা থাকবে।


চিকেনস নেক’ নিয়ে বিশেষ বার্তা আসতে পারে?

বিজেপি নেতাদের ধারণা, এই সফরে মোদী ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডোর সম্পর্কেও একটি বড় বার্তা দিতে পারেন। এই করিডোর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র সরু পথ। সামরিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে এটির গুরুত্ব অপরিসীম।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোদী এই গুরুত্বপূর্ণ করিডোরের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে নতুন কোনও ঘোষণা দিতে পারেন, যা আগামী নির্বাচনের প্রচারের একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে বিজেপির কাছে।


রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মোড়?

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি আসনে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কোন্দল, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পুনরাবির্ভাব—সব মিলিয়ে বিজেপির জন্য ঘুরে দাঁড়ানো প্রয়োজন। তাই এই সফরের মাধ্যমে মোদী রাজ্যের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি দলীয় রণকৌশল, প্রচার পদ্ধতি এবং কর্মীদের কাজের ধারা নিয়ে সরাসরি পরামর্শ দিতে পারেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই দলের নতুন ছক তৈরি হবে এই সভায়—এমন ইঙ্গিতও মিলেছে।


 নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বার্তা, দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ

আলিপুরদুয়ার সফরের পুরো সময়জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও ছাড় নেই। রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং এসপিজি সমন্বয়ে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা। সভাস্থলের চারপাশে নজরদারির জন্য বসানো হয়েছে ড্রোন, মেটাল ডিটেক্টর এবং বায়োমেট্রিক স্ক্যানার।

এটি শুধুমাত্র একজন প্রধানমন্ত্রীর সফর নয়—এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা, যা প্রভাব ফেলতে চলেছে উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে পুরো রাজ্য রাজনীতিতে।



মোদীর এই সফর নিছক একটি জনসভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আগামী নির্বাচনের বড় রণকৌশলের ইঙ্গিত মিলবে এখান থেকে। ‘চিকেনস নেক’ নিয়ে বার্তা, বিজেপির অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন এবং উত্তরবঙ্গে ভোটের সমীকরণ—সব কিছু মিলে এই সফর হতে চলেছে ২০২৪-২৫ সালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মাইলফলক।

Walang nakitang komento