বিগত বছরগুলোতে ১৫ আগস্টে টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণ মুখর থাকলেও এ বছর একেবারে শূন্য। কোনো নেতা, কর্মী বা দর্শনার্থী আসেননি, নিরাপত্তা ছিল চূড়ান্ত।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে এবারের ১৫ আগস্ট ছিল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। বিগত হাসিনা সরকারের সময়ে এই দিনে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে শোক দিবস পালন, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া-মাহফিল ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত হতো। দলীয় এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে হাজারো নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখর থাকত সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণ। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সমাধিসৌধ ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাজানো হতো উৎসবমুখর পরিবেশে, যদিও দিনটি ছিল শোকের।
তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর এ বছরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকাল থেকে টুঙ্গিপাড়ায় ছিল সুনসান নীরবতা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সমাধিসৌধে কেউ আসেনি—না কোনো নেতা, না কোনো কর্মী, এমনকি সাধারণ সমর্থকরাও নীরব থেকেছেন। গত বছরও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কিছু আয়োজন করেছিল, কিন্তু এবার তা অনুপস্থিত।
এদিন সকাল থেকেই টুঙ্গিপাড়ায় নেওয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের চারপাশে মোতায়েন ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য, প্রধান ফটকে ছিল পুলিশের সশস্ত্র পাহারা। সাঁজোয়া যানও মোতায়েন করা হয়, পাশাপাশি সমাধিসৌধের তিনটি প্রবেশদ্বারই সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। টুঙ্গিপাড়ার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের কারণে পুরো এলাকায় ছিল নিরাপত্তার চাদর।
প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স ছিল জনশূন্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো দর্শনার্থী বা রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে সেখানে দেখা যায়নি। আগে যেখানে প্রতিদিনের মতোই পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফটোগ্রাফি ও ভিড় থাকত, এবার সেখানে ছিল নীরবতা ও শূন্যতা।
সমাধিসৌধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কজুড়ে পড়ে আছে শুকনো পাতা, টাইলসের ওপর শ্যাওলার আস্তরণ, বিশ্রামাগার ও ভবনের আসবাবপত্রে ধুলো জমে রয়েছে। একসময়ের সতেজ ফুলগাছগুলোও এখন নিস্তেজ, প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায়। এ দৃশ্য যেন প্রতিফলন ঘটাচ্ছিল সময়ের পরিবর্তনের।
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম জানান, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ বছরের ১৫ আগস্টে টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণের এই জনশূন্যতা রাজনৈতিক বাস্তবতার এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।