একটি পশুর হাটের সিডিউল কেনার মতো একটি সাধারণ ঘটনার রেশ ধরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ‘পায়ের রগ কেটে হত্যার’ হুমকি—এ ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায়। হুমকির শিকার বন্দর প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ও ফটো সাংবাদিক মেহেদী হাসান রিপন। অভিযুক্ত স্থানীয় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ও সদ্য যুবদলে যুক্ত হওয়া মিনহাজ মিঠু এবং তার সহযোগী ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (২৫ মে) বিকেল ৩টার দিকে, বন্দর উপজেলা পরিষদ চত্বরে। অভিযোগ অনুযায়ী, ওইদিন সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা এলাকায় অবস্থান করছিলেন সাংবাদিক রিপন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি সাবদী গরুর হাটের একটি সিডিউল ক্রয় করেন, যা সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
পেশাগত কাজ শেষে বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা প্রাঙ্গণ থেকে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ করেই রিপনের পথরোধ করে মিনহাজ মিঠু ও তার দলবল। তারা সিডিউল কেনার কারণ ব্যাখ্যা চাওয়ার বদলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। সাংবাদিক রিপন যখন পরিস্থিতি বোঝাতে শান্তভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন, তখনই তাকে ‘পায়ের রগ কেটে ফেলা হবে’ বলে হুমকি দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মেহেদী হাসান রিপন বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, “আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। কোনো প্রকার অন্যায় করিনি। শুধু সিডিউল কেনার জন্য আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় – কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।”
অভিযুক্তদের পরিচয়:
মূল অভিযুক্ত মিনহাজ মিঠু দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, হাট নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি যুবদলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে নতুনভাবে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হাটবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে উঠেপড়ে লেগেছে।
প্রশাসনের বক্তব্য:
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভ:
এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বন্দর প্রেসক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, “এভাবে একজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে হুমকি দিলে তা মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য মারাত্মক হুমকি।”
এ ঘটনায় আবারো স্পষ্ট হলো—কোনো একটি গোষ্ঠী হাটবাজার, ঠিকাদারি ও অন্যান্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর সেই স্বার্থে বাধা মনে করলেই তারা হামলা কিংবা হুমকির পথ বেছে নিচ্ছে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।