নারায়ণগঞ্জের বন্দরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নির্বাচনে লটারির মাধ্যমে ১১ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ লটারির আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নতুন ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ লটারির মাধ্যমে। সোমবার বন্দর উপজেলা পরিষদের সেমিনার কক্ষে উপজেলা প্রশাসন এবং খাদ্য বিভাগ যৌথভাবে এ লটারির আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, সরকার সাধারণ মানুষের জন্য চালু করা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা। এজন্য ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সম্পন্ন করা হয়েছে।
লটারিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাব বন্দর সভাপতি আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল আলম জাহিদ, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ মুশফিকুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল কাইয়ুম খান, কৃষি কর্মকর্তা নূর এ কাউছার এবং সহকারী সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা মোঃ ফারুক ইকবাল। অনুষ্ঠানে ডিলার প্রার্থীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ডিলার হওয়ার জন্য এবার মোট ৩৬ জন প্রার্থী আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৪ জন আবেদনকারী বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। যেহেতু প্রতিটি ইউনিয়নের নির্দিষ্ট পয়েন্টে একাধিক প্রার্থী ছিলেন, তাই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে লটারির আয়োজন করা হয়। লটারির মাধ্যমে ১১টি পয়েন্টের জন্য ১১ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
লটারিতে অংশগ্রহণকারী অনেক প্রার্থী জানান, এর আগে নানা ক্ষেত্রে ডিলার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এবার লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করায় তারা প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ ও ন্যায্য মনে করছেন। নির্বাচিত ডিলারদের দায়িত্ব হবে ইউনিয়নের নির্দিষ্ট এলাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় গরিব ও অসহায় মানুষের কাছে সঠিক সময়ে ন্যায্যমূল্যে চাল সরবরাহ করা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলো ন্যায্যমূল্যে খাদ্য পেয়ে অনেকটাই স্বস্তি পান। তবে ডিলারদের সততা, দায়িত্বশীলতা ও নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা হলে এ কর্মসূচির সুফল আরো বেশি পরিমাণে মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা চাই যারা ডিলার হয়েছেন তারা যেন দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেন। এখানে কোনো প্রকার অনিয়ম বা ভোগান্তি মেনে নেওয়া হবে না। উপজেলা প্রশাসন নিয়মিতভাবে তদারকি করবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এর মাধ্যমে অতি দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিতরণ করা হয়। এই কর্মসূচি সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে এবং সঠিকভাবে খাদ্য পৌঁছানোর জন্য প্রতিটি এলাকায় ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। বন্দরের এই লটারি প্রক্রিয়া সেই উদ্যোগেরই অংশ, যা স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা জানান, এটি তাদের জন্য একটি বড় দায়িত্ব। তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে, সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের এ সহায়তা যেন যথাযথভাবে পৌঁছে যায়, সে বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ সততা বজায় রাখবেন।