বন্দর খেয়া ঘাটে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিজয়! প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ফিরল ন্যায্যতা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বন্দর খেয়া ঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা বাড়তি টোল অবশেষে বাতিল। ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের পর উপজেলা প্রশাসনের তড়িৎ পদক্ষেপে ফিরল ন্যায্য নিয়ম, টোল ফ্রি হল শিক্ষার্থীদের যাতায়াত।..

বন্দর প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র খেয়া ঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা বাড়তি টোল এবং ঘাট এলাকায় চলমান বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণ, ছাত্র সমাজ ও সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে যখন "আমরা বন্দরবাসী", ছাত্র-জনতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন— এই তিনটি সংগঠন একত্রিত হয়ে বন্দর সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটে মানববন্ধনের কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

মানববন্ধনের পূর্বে জনগণের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলীর সক্রিয় হস্তক্ষেপে ঘাট ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার, ৪ জুলাই, এই আলোচনাটি উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঘাট ইজারাদার দিদার খন্দকার, বন্দর সিএনজি স্ট্যান্ড মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডালিম সিকদার, শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুন্নী সরদার, ছাত্রনেতা রিদয় ভূঁইয়া, স্থানীয় মাঝি, পেশাজীবী প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা। আলোচনা শেষে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্দর ঘাটের দীর্ঘদিনের সমস্যার অবসান ঘটে।

গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ:

  1. নৌকা পারাপারে আর কোনো টোল নেয়া হবে না।
    আগে যাত্রীদের নৌকায় উঠলেই ২ টাকা করে টোল আদায় করা হতো, যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ নৌকা চলাচলে যাত্রীদের কোনো প্রকার টোল দিতে হবে না।

  2. শুধু ট্রলার পারাপারে ২ টাকা টোল বহাল থাকবে।
    ট্রলার যারা ব্যবহার করবেন, তারা আগের নিয়ম অনুযায়ী ২ টাকা টোল দেবেন। এটি ব্যবস্থাপনাগত ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত।

  3. শিক্ষার্থীদের জন্য টোল সম্পূর্ণ ফ্রি ঘোষণা।
    প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী টোল ফ্রি সুবিধা পাবেন। তবে এজন্য তাদের ইউনিফর্ম পরা বা বৈধ ছাত্র আইডি প্রদর্শন করতে হবে।

  4. নৌকা রিজার্ভ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা।
    যাত্রীদের সুবিধার্থে রিজার্ভ ব্যবস্থার একটি নির্দিষ্ট হার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে এলোমেলোভাবে আদায় করা হতো।

  5. নরমাল নৌকা ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ।
    যাত্রী প্রতি নির্ধারিত ভাড়া ৫ টাকা এবং প্রতি নৌকায় সর্বোচ্চ ১৫ জন যাত্রী বহনের নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে।

  6. ঘাট এলাকায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ হবে।
    বন্দর বাজার থেকে ঘাট পর্যন্ত অবৈধ দোকান ও স্থাপনা, যেগুলো চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল, সেগুলো প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে বলে জানানো হয়।

 ছাত্রনেতাদের মতামত:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা মুন্নী সরদার বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলেছি এবং এই সিদ্ধান্তগুলো সেই সংগ্রামেরই ফসল।” তিনি প্রশাসনের এই দ্রুত পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও মানুষের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

 মাঝিদের বক্তব্য:

ঘাটের একজন অভিজ্ঞ মাঝি বলেন, “আগে কেউ কিছু না বললেও এখন ছাত্ররা সামনে এসে আমাদের কথা বলছে। এই সিদ্ধান্তে আমরাও খুশি। যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা কমবে, শান্তিতে কাজ করতে পারব।”


প্রশাসনের হুঁশিয়ারি:

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাফ জানিয়ে দেন, এসব সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ঘাট এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিয়মিত মনিটরিং চলবে বলে জানান তিনি।


জনগণের প্রতিক্রিয়া:

এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক স্বস্তি ও সন্তোষ বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন, বহুদিন পর প্রশাসন ও ছাত্র আন্দোলনের যৌথ চাপে ঘাট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এসেছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রদের ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট করছেন।


 উপসংহার:

বন্দর খেয়া ঘাটে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত টোল আদায় ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন ও প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই জয় শুধু টোল মুক্তির নয়, বরং জনস্বার্থে সোচ্চার হওয়ার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

Không có bình luận nào được tìm thấy