close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বড়লোকদের গলা কাটেন, কিন্তু গরিব রোগীদের ১৪-১৫টা টেস্ট দেওয়া বন্ধ করেন: আসিফ নজরুল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Interim government legal adviser Asif Nazrul has urged doctors to stop imposing unnecessary medical tests on poor patients, stressing that while the wealthy may afford it, the poor deserve humane trea..

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, গরিব রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বড়লোকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হলেও দরিদ্রদের জন্য মানবিক আচরণ জরুরি।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট আইনবিদ ড. আসিফ নজরুল দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের অনিয়ম ও বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, অনেক চিকিৎসক রোগীর কথা ভালোভাবে না শুনেই প্রেসক্রিপশন দেন এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেন। তার ভাষায়, “মানুষ অনেক গরিব। বড়লোকদের গলা কাটেন সমস্যা নেই, কিন্তু গরিব রোগীদের ১৪-১৫টা টেস্ট দেওয়া বন্ধ করুন।”

শনিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান।

ড. আসিফ নজরুল একটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তার বাসার এক কর্মচারী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ১৪টি পরীক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু পরে সে ঢাকার বাইরে একটি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়, যেখানে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “তাহলে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনই বা কোথায়?”চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে রোগীদের বাধ্য করা হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য ডাক্তারদের আলাদা সময় বরাদ্দ করার বিষয়টিও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। আসিফ নজরুল সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “আপনারা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল? নিজেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”

তিনি হাসপাতালের সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। নার্সদের অস্বাভাবিক কম বেতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একজন নার্স যদি মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন পান, তবে তিনি কীভাবে মানসিক শান্তি বজায় রেখে রোগীদের সর্বোত্তম সেবা দেবেন? এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তিনি হাসপাতাল মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফা না করে মানবিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অন্যায় মুনাফা বন্ধ করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত মুনাফা বৈধ হলেও অযৌক্তিকভাবে অর্থ আদায় গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মানুষকে হাসপাতালে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে—এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।

তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধরনের রূপান্তর আনার জন্য সরকার একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। লাইসেন্স নবায়নের জটিল প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং সঠিক তদারকির বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিপিএইচসিডিওএর সাধারণ সম্পাদক ও ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম। তিনি বলেন, ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার অভিযোগে চিকিৎসক ও হাসপাতাল মালিকদের গণহারে মামলা বা গ্রেপ্তার করা উচিত নয়। তদন্তের পর দোষ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও জানান, সংগঠনটি শিগগিরই একটি ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি করবে, যেখানে সব হাসপাতাল মালিকের তথ্য থাকবে। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা ২,৬০০ হলেও তা বাড়িয়ে ৪,০০০ করা হবে। নিম্নমানের বা নিয়ম না মানা কোনো প্রতিষ্ঠানকে সদস্যপদ দেওয়া হবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।

দেশের স্বাস্থ্যসেবায় অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ কোম্পানির প্রভাব ও হাসপাতালের অতিরিক্ত মুনাফা নিয়ে যে সমালোচনা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, আসিফ নজরুলের বক্তব্য তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার বিস্ফোরক মন্তব্য এখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভকেও আরও জোরালোভাবে প্রকাশ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার এবং বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট সমাধান সম্ভব নয়।

Walang nakitang komento